ঝুপড়ির আড়ালে চট্টগ্রাম বন্দরের চোরাইপণ্যের রমরমা ব্যবসা (ভিডিও)

চুরির জিনিস বেচতে বসে রীতিমতো হাটও

চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার এমপিবি গেইট রেলবিট এলাকা। চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন এই জায়গাটি দখল করে বানানো হয়েছে ঝুপড়ি। আর এসব ঝুপড়িতে রয়েছে বন্দরের চোরাই মালামালের স্তূপ। ঝুপড়ি তৈরি করে চোরাই মালের ব্যবসা করেন হালিম সওদাগর নামে এক ব্যক্তি ও তার ছেলে সোহেল। সোহেল জানান, তারা অবৈধ কোনো ব্যবসা করছেন না। ভাঙারির ব্যবসাই করেন তারা ঝুপড়িতে।

কিন্তু চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসলো ভাঙারির ব্যবসার আড়ালে বাবা-ছেলের চোরাইপণ্যের কারবারের চিত্র। মূলত বন্দর থেকে চোরাইপথে বের করে আনা প্লাস্টিক দানা, প্লাস্টিকের রোলসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য নিয়েই তাদের বাণিজ্য।

তবে শুধু হালিম সওদাগরই নয়, চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য চুরি করছে বিশাল একটি সিন্ডিকেট। চুরির পণ্য বিক্রির জন্য বসে রীতিমতো হাটও। এই হাট আবার বসে বন্দর এমপিবি গেইট ঘেঁষেই। কখনও বন্দর থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন বের হচ্ছে অবৈধ উপায়ে। কখনও বের করা হচ্ছে চোরাই কয়লা, প্লাস্টিক দানা কিংবা গাড়ির যন্ত্রাংশ। আবার পেঁয়াজ রসুন আদাও আছে চোরাইপণ্যের তালিকায়। রয়েছে বিষাক্ত সীসা ও গন্ধকজাতীয় দ্রব্যও।

অভিযোগ উঠেছে, বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরীদের ম্যানেজ করে বের করা হচ্ছে এসব পণ্য। চোরাইপণ্যের একটি ট্রাক বন্দরের সীমা পার করতে হলে গুণতে হয় টাকা। পণ্যভেদে এ টাকার অংক উঠানামা করে ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে। স্থানীয় থানা পুলিশের একটি চক্রের হাতেও যায় এ টাকার ভাগ।

জানা গেছে, স্থানীয় চোরাকারবারিদের সঙ্গে বন্দরের কিছু কর্মীর যোগসাজশে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অবৈধপথে বের হচ্ছে পণ্যের কাঁচামালসহ নানা জিনিসপত্র। প্রতিটি চালানে বের হয় কয়েক লাখ টাকার মালামাল। সম্প্রতি এসব কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কর্মরত আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধেও।

শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় স্থানীয় একটি চক্র পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছে অবৈধ পণ্যের বিশাল মজুদ। চট্টগ্রামের নিউমুরিং এমপিবি গেইট রেলবিট এলাকায় অবৈধ পণ্যের এই মজুদ রয়েছে। রাত নামলে পিকআপ কিংবা ছোট ট্রাকে মালামাল লোড এবং আনলোড করা হয়। সম্প্রতি ওই এলাকায় আমদানি করা পলিথিনের দানা ও প্লাস্টিকের রোল একটি পিকআপ ভ্যানে বোঝাই করতে দেখা গেছে একটি ভিডিওচিত্রে। স্থানীয়দের দাবি, ভিডিওতে উঠে আসা চিত্র চোরাইপণ্যের।

অভিযোগ রয়েছে, এমপিবি গেইট এলাকার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সিন্ডিকেটের হাত থেকে বড় অংকের টাকা যায় ইপিজেড থানার কথিত ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত সুলতান এবং বন্দর থানার কথিত ক্যাশিয়ার হারুনের হাতে। সাপ্তাহিক ও মাসিক হিসেবে মাসোহারা দিয়ে বছরের পর বছর চলছে এ অবৈধ ব্যবসা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার নিউমুরিং এমপিবি গেইট এলাকার হালিম সওদাগরের বাড়ির মো. হালিম প্রকাশ হালিম সওদাগর ও তার ছেলে রুবেল প্রকাশ বাবা রুবেল, সোহেল প্রকাশ কালা সোহেল ও হাসান প্রকাশ ল্যাংড়া হাসান, বন্দরের শ্রমিক নেতা মো. কবিরসহ কয়েকজন শ্রমিক নেতা জড়িত রয়েছেন চোরাই মালের এই কারবারের সঙ্গে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন এমপিবি গেইট রেলবিট এলাকায় হালিম সওদাগরের ঝুপড়ি ছাড়াও স্থানীয় ভিআইপি হোটেলের আশপাশেও মজুদ রয়েছে অবৈধ মালামাল। স্থানীয়রা জানায়, দিনে এখানে তেমন কোনো সাড়াশব্দ থাকে না। রাত নামলেই শুরু হয় বন্দরের চোরাই মালামাল মজুদের আয়োজন। রাত পোহানোর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় এসব মালামাল।

অভিযোগের বিষয়ে হালিম সওদাগরের ছেলে সোহেল বলেন, ‘আমরা ভাঙ্গারির ব্যবসা করি। এখানকার প্রশাসনের লোক জানেন আমরা অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিনা।’

তবে ভাঙারি ব্যবসার কথা বলা হলেও তাদের ঝুপড়ি থেকে প্লাস্টিক দানা ও প্লাস্টিকের রোল বের করে পিকআপ ভ্যানে তোলার ভিডিও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বন্দরের চোরাই মালামাল বের করার বিষয়ে আমি কিছুু জানি না।’ তিনি এ বিষয়ে জানতে বন্দর নিরাপত্তা বিভাগের বিভাগের পরিচালককে ফোন করার পরামর্শ দেন।

এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর নিরাপত্তা বিভাগের বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল আহমেদ জুনাইদ আলম খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (বন্দর জোন) আরেফিন জুয়েল প্রতিবেদক বলেন, ‘এই ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তবুও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!