ছয় হাজার কোটি মেরে নুরজাহান গ্রুপের রতন ধরা ঢাকায়, ‘লুকোচুরি’ পুলিশের

প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার শীর্ষ ঋণখেলাপি নুরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমেদ ওরফে রতনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ তথ্য দিতে ‘লুকোচুরি’ করছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম।

রেজাউল করিম বলেন, প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার শীর্ষ ঋণখেলাপি নুরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমেদ রতনকে বৃহস্পতিবার রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তিনি খাতুনগঞ্জের ভোগপণ্য ব্যকবসায়ী। তিনি ২০১১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাং ক, জনতা ব্যাং ক, কমার্স ব্যাং ক, সাউথইস্টসহ বিভিন্ন ব্যাং ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, অর্থঋণ আদালতে রতনের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি মামলা চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ দেশত্যাজগের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে কোতোয়ালী থানার এসআই মেহেদী হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয় কে জানিয়েছে? যদি এমন কিছু ঘটে থাকে তবে অফিসিয়ালি জানানো হবে।’

এই বিষয়ে জানতে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এসএম ওবায়েদুল হককে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এর আগে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শীর্ষ ঋণখেলাপি নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনকে গ্রেপ্তারে ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অর্থঋণ আদালতের বিচারক মজাহিদুর রহমান।

এছাড়া তারও আগে ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলা হলেও কোনো দরপত্র পড়েনি। পরে ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪৬৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭০ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

অন্যদের মধ্যে জহিরের স্ত্রী মনোয়ারা ওরফে তাসমিন আহামেদ, ভাই টিপু সুলতান ও জসিম উদ্দিন, ইফতেখার আল-জাবের এবং ফরহাদ মনোয়ারের বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এরপর ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৬৮ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫২ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কানাডায় টাকা পাচারকারী ধনকুবের জহির আহমেদ রতন এবং তার ভাই ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন অর্থঋণ আদালত।

একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিরা দেশত্যাগ করেছেন কি-না তা খতিয়ে দেখতে বিশেষ পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে বিশেষ পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসামি জহির আহমেদ রতন, টিপু সুলতান, জসিম উদ্দিন এবং ইফতখোর আল জাবের দেশেই ছিলেন। তবে অন্যরা দেশত্যাগ করেন।

এরপর গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাভোগ করছেন। তবে অন্যদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে এমডি জহির আহমদ রতন ও তার দুভাই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০টি মামলা রয়েছে। এ কারণে আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তার কোনো হদিস পায়নি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা ঋণ নেয় জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তা সুদ ও দণ্ড সুদসহ ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দাঁড়ায়। গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পাওনা আদায়ের জন্য ৫ মাসের কারাদণ্ড দেন অর্থঋণ আদালত।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংক জুবিলী রোড শাখা নুরজাহান গ্রুপের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ৪০ কোটি টাকা।

আরও জানা গেছে, জহির আহমদ রতন মেসার্স আহমদ ট্রেডার্সের নামে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালে মামলা করা হয়। ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় বাদিপক্ষ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন। আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

রতনের স্ত্রী-সন্তান বসবাস করেন কানাডায়। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ রতনের পাসপোর্ট জব্দ ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

আরএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!