বদলে যাওয়ার কথা ছিল বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার খ্যাত শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়ক। আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে যানজটের জন্য বহুল আলোচিত ৮ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই সড়কটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং হতে রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি হয়ে বাটারফ্লাই পার্ক পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়ক (রিভার সাইড অংশ) চার লেনে উন্নীত করার কথা ছিল চসিকের। সাংবাদিক ডেকে মহা আয়োজন করে প্রচারও করা হয়েছিল সেই সময়। তবে ওই উদ্যোগ মেয়র নাছিরের তর্জন-গর্জনেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। বদল আর হয়নি বিমানবন্দর সড়কের সেই করুণ চিত্রের। এখনো যানজট আর নিত্য ভোগান্তি এই সড়কের যাত্রীদের চিরসঙ্গী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘চসিকের প্রকৌশল বিভাগের দুর্বলতার কারণেই মেয়রের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না। মেয়র নাছিরের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশে ভয়াবহ যানজট থেকে বিদেশী নাগরিক, প্রবাসী, ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং সর্বোপরি নগরবাসী মুক্তি পেতো। একই সাথে বিশ্বের কাছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হতো।’
ফ্ল্যাশব্যাক
দুই বছর আগে ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে সর্বপ্রথম বিমানবন্দর সড়কটি প্রশস্ত করার পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের জানান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এর তিন দিন পর ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট সোমবার সকালে নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত ২৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বৈঠকে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তাদের আর্থিক ক্ষতির কথা তুলে ধরেছিলেন মেয়রের কাছে। তারা মেয়রকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন দিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন মেয়র।
সাংবাদিক ডেকে যা বলেছিলেন মেয়র নাছির
২৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক শেষে মেয়র নাছির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গতিশীল করা এবং বিমানবন্দর ব্যবহারকারী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার যাত্রীসাধারণের জন্য এই সড়ক চার লেনে উন্নীত করা সময়ের দাবি। শাহ আমানত বিমানবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার। বাইরে থেকে কেউ বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করার সময় একটি নেতিবাচক মাইন্ডসেট তৈরি হয়ে যায়। এই সড়ক দিয়ে দুটি গাড়ি পাস করতে পারে না। চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। সেই পরিকল্পনায় বিমানবন্দর সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাদের পরিকল্পনা উনাদের অবহিত করেছি। এর আগে এ বিষয়টা নিয়ে বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। উনি এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। এরপর চিন্তা-ভাবনা করে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি।’
সেই সময় মেয়র আ জ ম নাছির বলেছিলেন, ‘আড়াই বছরের মধ্যে আমার মেয়াদের সময়ের ভেতর আমরা বিমানবন্দর সড়কের চার লেন কাজ শেষ করতে পারবো। এটা আমাদেরকে করতেই হবে। এর বিকল্প নেই। কাজটা ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখার সুযোগ নেই। এখন না করতে পারলে আর কখনও এই কাজ করা সম্ভব হবে না।’
তবে দুই বছর পার হলেও এখনো প্রকল্পের ডিপিপিও তৈরি করতে পারেনি চসিকের প্রকৌশল বিভাগ।
বিমানবন্দর সড়কের কাজ যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই সড়কের অবস্থা আগের মতোই খারাপ, যানজট। কোন বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। উদ্যোগ নিয়েও কেন সিটি করপোরেশন কাজটা করতে পারছে না, সেটা আমরা বলতে পারবো না। তাদের সমস্যা থাকতে পারে।’
একের দায় অন্যের ঘাড়ে
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেই সময় ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্পটির ডিপিপি তৈরি প্রক্রিয়াধীন আছে। ডিপিপি তৈরি করার জন্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উনি এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’
জানতে চাইলে প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘ডিপিপি তৈরির কাজটা সিটি করপোরেশন করছে। আমাকে ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় ও কী পরিমাণ জায়গা লাগবে, তার এসেসমেন্ট করে দিতে বলা হয়েছিল। আমি করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বন্দরের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই সিটি করপোরেশন ডিপিপি তৈরির কাজ শুরু করেছে। সিটি করপোরেশনের আরো অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন বন্দরের ক্লিয়ারেন্স পেতে বেশি দৌঁড়ঝাপ করেনি। এ কারণে হয়তো ডিপিপি তৈরি করতে দেরি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিপিপি অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে জমা দেবো।’
ডিপিপি তৈরিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘মুখে বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন। জায়গা অধিগ্রহণ আছে। বন্দরের সাথে বৈঠক করতে হয়েছে। এজন্য দেরি।’
আলী/সিপি