চাঁদাবাজির মামলার পরই ডাক্তারের বিরুদ্ধে নার্সের শ্লীলতাহানির পাল্টা মামলা

মামলার পরপরই হাসপাতাল মালিক গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালে চাঁদা দাবির পর মালিকপক্ষকে হেনস্তার ঘটনায় মামলা হওয়ার পরপরই ওই হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে এক নার্সকে ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগ তুলে পাল্টা মামলা হয়েছে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) সকালে হাসপাতালের মালিককে অফিস কক্ষে আটকে রেখে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মিঠানালা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ তুরিনকে ১ নম্বর আসামি ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানাকে ৩ নম্বর আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার একদিন পর রোববার (১৪ আগস্ট) ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চিকিৎসক জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে মিরসরাই থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এদিকে মিরসরাই থানায় ওই মামলা দায়েরের দুদিন পর মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় হাসপাতালটিতে কর্মরত এক নার্স বাদি হয়ে হাসপাতালটির মালিক জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এরপর মিরসরাই থানার পুলিশ তড়িঘড়ি করে জসীম উদ্দিনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়।

তবে জসীম উদ্দিন ও তার স্বজনরা দাবি করেছেন, মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানার পরিকল্পনায় একজন নার্সকে ব্যবহার করে ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগটি সাজানো হয়েছে।

শ্লীলতাহানির শিকার হওয়া ওই নার্স দাবি করেছেন, ‘হাসপাতালের মালিক ও ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মো. জসীম উদ্দিন গত ৬ আগস্ট আমাকে তার কক্ষে ডেকে পাঠান। এ সময় হাসপাতাল প্রায় লোকজন শূন্য ছিল। আমি মালিকের কক্ষে গেলে মো. জসীম উদ্দিন হঠাৎ কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোরপূর্বক আমাকে চুমো দেয় এবং শ্লীলতাহানি করে। দ্রুত দৌড় দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করে বিষয়টি আমার খালাতো ভাই নুর হাসান ও তার প্রতিবেশী মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিমকে জানাই।’

ওই নার্স জানান, ঘটনার পর হাসপাতালের মালিক মো. জসীম উদ্দিন হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম শহরে চলে গেলেও গত শনিবার (১৩ আগস্ট) হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে জসীম উদ্দিনের আসার খবর পেয়ে নার্সের খালাতো ভাই নুর হাসান, মাসুদ করিমসহ কয়েকজন গিয়ে তার সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। তারা সমাধানে ব্যর্থ হলে ওই নার্সকে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

ওই নার্স দাবি করেছেন, তিনি অভিযোগ নিয়ে থানায় আসার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাঃ মো. জসীম উদ্দিনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করতে চেয়েছিল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কেউ চাঁদা চায়নি। শ্লীলতাহানির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

চাঁদাবাজির মামলার বাদি জসীমের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, ‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মিঠানালা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ তুরিণ, ইউছুফ, উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানা, আবিবা, সোহেল, হাসান আমার স্বামী মো. জসীম উদ্দিনকে জোরপূর্বক হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকে রেখে হাসপাতালের অভ্যার্থনা ডেস্কে থাকা এক নার্সকে ত্রিশ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করতে চাপ প্রয়োগ করে। তারা ওই নার্সকে তার স্বামীর সাথে জড়িয়ে দিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দেয়।’

চাঁদা দাবির বিষয়ে সাবিনা বলেন, ‘প্রথমে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে প্রায় ৩ ঘন্টা হাসপাতালের অফিস কক্ষে আটকে রাখে আমার স্বামী জসিম উদ্দিনকে। এরপর তারা এক পর্যায়ে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। পরে ৭ লাখ টাকা দিবে এ মর্মে জসিম উদ্দিন থেকে একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়।’

চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানা বলেন, হাসপাতালের মেয়েটি শ্লীলতাহানির বিষয়ে তাকে জানালে তিনি কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এখন উল্টো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।

মাসুদ করিম রানা বলেন, ‘গতকাল রাতে মামলা হওয়ার আগে মিরসরাই থানা থেকে এবং বিভিন্নজন আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে বিষয়টি সমাধান করার জন্য। আমি যেন মেয়েটিকে বলি শ্লীলতাহানির মামলাটা না করতে, তাহলে আমার নামে মামলা হবে না। আর মেয়েটা যদি মামলা করে তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে। তখন আমি বলেছি যে, মামলা হোক, মেয়েটা যেন সঠিক বিচার পাই। এই জন্য আমার বিরুদ্ধে ১০০টা মামলা হোক এতে আমার কোন সমস্যা নেই।’

খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের হাসপাতাল এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোপাল চৌধুরী জানান, শ্লীলতাহানির শিকার ওই মেয়েটি তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কিন্তু তিনি ঘটনাটি ওই মেয়ের কাছে জেনেছেন সোমবার রাতে। তখন বিষয়টি নিয়ে এতই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তার কিছু করার ছিল না। তবে হাসপাতালে চাঁদাবাজি অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন। তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কিছু জানায়নি বলে জানান।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন জানান, বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালের একটি ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষই দুটি মামলা করেছে। শ্লীলতাহানির অভিযোগ হাসপাতাল মালিক জসীম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। দুটি অভিযোগই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!