চবির শাটল ট্রেন, বহিরাগতদের উৎপাতে অপরাধের অভয়ারণ্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে বহিরাগতদের উৎপাত কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। বহিরাগতরা শাটল ট্রেনে উঠে চুরি, ছিনতাই থেকে শুরু করে ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে একের পর এক।

গত দুই মাসের মাথায় বহিরাগত বখাটের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। এছাড়া শাটল ট্রেন থেকে শিক্ষার্থীদের মোবাইল, ব্যাগ ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বহিরাগত বখাটেরা দুই শিক্ষার্থীর মোবাইল ছিনতাই করে।

এছাড়া গত দুই মাসে অন্তত ১০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। শাটল ট্রেনে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটতে থাকলেও তা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেলওয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শাটলে ট্রেনে উঠেন অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্রী। এ সময় শাটলে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণচেষ্টা চালায় বহিরাগত এক বখাটে। তখন শাটল ট্রেনের আশপাশে কোন পুলিশ ছিল না চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল চলন্ত শাটল ট্রেনে বহিরাগত বখাটের হাতে আরেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হন। এই ঘটনার পর রেলওয়ে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসলেও কিছুদিন না যেতেই আবার একই ঘটনা ঘটে।

এদিকে শাটল ট্রেনে বহিরাগতরা উৎপাত চালানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ গত ১৫ দিনে ছাদ থেকে পরে অন্তত ৫ জন বহিরাগত আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যুও হয়েছে। এছাড়া শাটলে উঠতে বারণ করলে রীতিমতো শিক্ষার্থীদের সাথে মারমুখী আচরণ করে বহিরাগতরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সাতবার ক্যাম্পাসে যাতায়াত করে শাটল ট্রেন। প্রতিটি শাটলে বগি থাকে আট থেকে নয়টি। এসব ট্রেনে অন্তত দিনে চড়েন ১০ হাজার শিক্ষার্থী।

এক শাটলে একজন পরিচালক (গার্ড), সহকারীসহ দুজন চালক (লোকোমাস্টার) ও একজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে দুজন কনস্টেবল থাকেন।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আশিক বলেন, শাটল ট্রেনে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে। অথচ পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বিকার। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে মাত্র দুই বা তিনজন পুলিশ। আমরা শাটলের প্রতি বগিতে পুলিশ চাই।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাইন উদ্দীন বলেন, বহিরাগত টোকাইরা শাটলের বগি ও ছাদে উঠে নাচানাচি করে, চুরি, ছিনতাই করে। ছাদ থেকে পরে মারাও যাচ্ছে তারা। অথচ শাটল থেকে বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও কোন উদ্যোগ নেই। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। প্রক্টরিয়াল বডি যদি ট্রেন ছাড়ার আগে একবার টহল দিতো তাহলে বহিরাগতদের উৎপাত অনেকাংশে কমে যেত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শাটল ট্রেনে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আমরা রেলওয়ে পুলিশকে সবসময় বলে আসছি। সর্বশেষ গতকালও রেলওয়ে পুলিশের এসপির সাথে কথা বলেছি। তবে তাদের কথায় যেটা ফুটে উঠেছে, তা হলো জনবল সংকট। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা করে যাচ্ছি।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফিরোজ আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রতিটি বগিতে একজন পুলিশ সদস্য দেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।

এমআইটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!