চট্টগ্রামে রেলের সিটিআরওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন কর্মচারীদের গাড়ি

আতাউল হক ভূঁইয়া, চট্টগ্রামের হালিশহর রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক (সিটিআরও)। তার বিরুদ্ধে রেল কর্মচারীদের সন্তানদের মাঠে খেলতে না দেওয়া, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারসহ অফিসের সময়সূচি না মানার অভিযোগও রয়েছে। তার এমন আচরণে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে রেলের কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির মাঠে রেলের কর্মচারীদের সন্তানরা যাতে খেলাধুলা করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে আদেশ দিয়ে রেখেছেন আতাউল। এছাড়া রেলের অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত গাড়িও তিনি নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া তার সুসজ্জিত অফিস থাকলেও অধিকাংশ সময় তিনি অফিসের বাইরে টেবিল পেতে কাজ করেন। একইসঙ্গে অফিসের সময়সূচিও তিনি মানেন না। নিজের ইচ্ছে মতো অফিসে আসেন আবার নিজের ইচ্ছেমতোই যান। এমনকি প্রায়সময় রাত ৯টা পর্যন্তও তিনি অফিস করেন। যার ফলে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিড়ম্বনায় পড়েন।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আতাউল হক ভূঁইয়া টেবিল নিয়ে বসে আছেন দপ্তরের বাইরে। এখানে বসেই তিনি কাজ করছেন। এছাড়া একাডেমির যে মাঠ রয়েছে সেখানে রেল কর্মচারীদের সন্তানদের খেলতে দেওয়া হচ্ছে না।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অফিস কর্মকর্তাদের আনা-নেওয়া করা অফিসের মাইক্রোবাসটি (ঢাকামেট্রো চ-০২-৪০৫৯) তিনি নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে, একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিনিবাস নষ্ট হলে রেক্টরের রিকুজিশনের পর সেটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়। বাস ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অফিসের কর্মকর্তাদের জন্য মাইক্রোবাসটি ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু আতাউল হক ভুঁইয়া ওই মাইক্রোবাসটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। নিয়ম অনুযায়ী, কর্মচারীদের বাস নষ্ট হলে দিনে একবার তাদের যাতায়াত সুবিধায় গাড়ি দিতে হবে। সেই হিসেবে মাইক্রোবাসটি কর্মচারীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়।

দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ২৮০লিটার তেল মাইক্রোবাসের জ্বালানি হিসেবে বরাদ্দ দেখানো হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যবহারের ফলে গাড়িটিতে মাসে ৮০ থেকে ১০০ লিটার তেল খরচ হয়। বাকি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়।

এদিকে অফিসের মিনিবাসটি টেন্ডারের মাধ্যমে চার মাস আগে মেরামতের জন্য দেওয়া হয় জহির অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। গাড়ি মেরামত করে একাডেমিকে বুঝিয়ে দিতে চাইলে আতাউল হক ভূঁইয়া গাড়িটি বুঝে নেননি। বরং তিনি ওই গাড়ি আগের অবস্থায় বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরকে।

ঠিকাদার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়ি মেরামত করা শেষ। এ মূহুর্তে গাড়ি ফেরত চাওয়া কোন আইনে পড়ে? এ পর্যন্ত গাড়ি ঠিক করা বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করে ফেলেছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাডেমির এক কর্মচারী বলেন, ‘বিকাল ৫টা থেকে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত অফিস খুলে বসে থাকতে হয়। আতাউল হকের শরীরচর্চা শেষ না হওয়া অবধি আমরা যেতে পারি না। আমাদের ৫টা পর্যন্ত অফিস করার নিয়ম হলেও তার হুকুমে ৯টা পর্যন্ত বসে থাকতে হয়।’

রাজ্জাক নামের রেল কলোনির এক বাসিন্দা বলেন, ‘নতুন রেক্টর আমাদের সন্তানদের খেলাধুলা করতে বলেছেন এই একাডেমির মাঠে। কিন্তু প্রধান প্রশিক্ষক আতাউল রেক্টরের আদেশ মানছেন না। কেউ যাতে মাঠে প্রবেশ করতে না পারে সেই আদেশ তিনি রেল নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে রেল নিরাপত্তা বাহিনী চিফ ইন্সপেক্টর আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘স্যারের নিষেধ অনুযায়ী মাঠে খেলতে না দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হয় স্থানীয়দের।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আতাউল হক ভুঁইয়ার অফিসে গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি। এছাড়া তার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করে এবং এসএমএস দিয়েও সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির রেক্টর রুহুল কাদের আজাদ বলেন, ‘আমি নিজে রেলের কর্মচারীদের সন্তানদের মাঠে খেলাধুলা করার জন্য বলেছি। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’

এছাড়া অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। এখনও অনেক কিছু জানি না। জেনে দ্রুত সুরাহার ব্যবস্থা নেবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!