চট্টগ্রাম রেলে কর্মচারীর বাসা খালি হওয়ার আগেই বরাদ্দ

অনিয়মের আখড়া জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর

রেল পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিয়ম-নীতি না মানার প্রবণতা রয়েছে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। পাহাড়তলীর ক্যান্টিন গেট নিউস্টোর ডিপো তাদের হাতে জিম্মি অনেকটা। এরমধ্যে আবার নতুন করে যোগ হয়েছে বাসা নিয়ে কারসাজি। টাকা নিয়ে এক প্রতিবন্ধী কর্মচারীর বাসা অন্যজনের নামে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদুল ইসলাম ও প্রধান সহকারী বেদার উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

গত ১৪ আগস্ট হাবিবুল ইসলামের শহীদ লেনের বাসা নম্বর ‘এডিএম-২/সি’ খালি উল্লেখ করে খালাসি মাকসুদুল হকের নামে বরাদ্দ দেন সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির।

তবে বাসাটি অন্যের নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে কোনো দপ্তরাদেশ এখানে পাঠানো হয়নি। বাসাটি এখনও হাবিবুর রহমানের নামেই বরাদ্দ আছে বলে নিশ্চিত করেছে বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্য-২ দপ্তর।

জানা গেছে, রেলের কর্মচারী মানসিক প্রতিবন্ধী হাবিবুল ইসলাম থাকেন ওই বাসায়। তার কোনো সংসার নেই। কাগজপত্র অনুযায়ী গত ২৯ মার্চ তিনি অবসরজনিত ছুটিতে যান। ৩০ মার্চ হাবিবুর রহমান তার আত্মীয় ইয়াসিনের সঙ্গে মিচুয়াল (উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে) করে আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদনের সুরাহা না করে মাসুদুল হককে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর এসবের পেছনে ছিলেন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদুল ইসলাম ও প্রধান সহকারী বেদার উদ্দিন।

আরও জানা গেছে, বেদার উদ্দিন ছয় বছর এক দপ্তরে চাকরি করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে রেলের টিন চুরি অভিযোগও আছে।

জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাজ্জাদুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকে ডিপোর কার্যক্রম নেই বললেই চলে। গুরুত্বপূর্ণ এ পদে থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ মানছেন না তিনি। রেলের উন্নয়নে বাধা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের বাসা বরাদ্দ নিয়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষের লেনদেন হয়। যে ঘুষ বেশি দেবে তাকেই আগে বরাদ্দ দেওয়া হয় বাসা।

অথচ রেলের চাকরিবিধি ৬-এ উল্লেখ আছে, এক বছর পাওনা ছুটি ভোগ করে বা ততোধিক দুই বছর অবসরজনিত ছুটি শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে বাসা বুঝিয়ে দিলে তবেই অন্যের নামে বাসা বরাদ্দ দেওয়া যাবে। এমনকি বাসা যার নামে বরাদ্দ তিনি ছাড়ার আগে অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে মিচুয়াল করতে পারেন। এতে মিচুয়াল করা ব্যক্তির বিষয়টি আগে সুরাহা না করে অন্য কাউকে বাসা বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই।

এ দপ্তর আদেশ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে জানান রেলওয়ের (পূর্ব) আইন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহম্মেদ।

এদিকে প্রতিবন্ধীর বড় ভাই রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাইফুল ইসলাম খান এ বিষয়ে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন।

তবে বাসা বরাদ্দ কমিটিতে কারা ছিলেন—এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি অফিস সহকারী বেদার উদ্দিন।

বাসা হস্তান্তরের আগে কিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ পালন করেছি।’

বাসার অবস্থান বুঝে না পেয়েও কিভাবে আরেকজনকে বরাদ্দ দেওয়া হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘পিআরএল শেষে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ সরেজমিন গিয়ে দপ্তরের আদেশ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) আনোয়ার হোসেন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীর বড় ভাইয়ের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়া অন্যান্য সকল অভিযোগ সম্পর্কে দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!