চট্টগ্রাম মেডিকেলে হঠাৎ রহস্যময় গোপনীয়তার জাল, সেবাপ্রার্থীরা হয়রানিতে

হাসপাতালের তথ্য দিতে পরিচালকের মানা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন চলতি বছরে পশ্চিম পাশে এনসিলারী ভবনের আট তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। আগে এটি হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দোতলায় ছিল। এখন আটতলায় নিয়ে গিয়ে পুরো ভবনটিকে রহস্যজনক নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ কোনো রোগী কিংবা রোগীর স্বজন সেখানে যেতে পারেন না। গেলেও গেটে দায়িত্বরত আনসারদের হাজারও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় ।

রোগী ও তাদের স্বজনদের হয়রানি, তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি ছাড়াও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় হেলাফেলার জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বারবারই সমালোচিত হয়ে আসছে। টাকা না দিলে হাসপাতালটিতে চিকিৎসার ন্যূনতম সুবিধাও পাওয়া যায় না বলে সাধারণ রোগীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ওষুধ চুরিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গেও বারেবারেই হাসপাতালটির নাম জড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) ইতিমধ্যে বেশকিছু নজিরবিহীন দুর্নীতির ঘটনা উদঘাটন করেছে।

এমনই যখন অবস্থা, এর মধ্যেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন যোগ দেওয়া পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মিডিয়ার কাছে হাসপাতালের কোনো বিষয়ে তথ্য দেওয়া যাবে না। হাসপাতালের ‘নিরাপত্তা ও স্বার্থ’জনিত কারণেই এটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যেকোন বিষয়ে তথ্য জানতে গণমাধ্যম কর্মীদের হাসপাতাল পরিচালকদের সাথে দেখা করতে হয়। অতীতে পরিচালকদের কেউ কেউ তথ্য পাওয়ার জন্য তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন কিংবা সাদা কাগজে আবেদন করতে বলতেন। অনেক সময় আবেদন ছাড়াও সব শুনে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিতেন।

শনিবার (২৮ মে) চট্টগ্রাম প্রতিদিনের রিপোর্টার কিছু তথ্য জানতে হাসপাতালের পরিচালকের সাথে দেখা করলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান তাকে সাফ জানিয়ে দেন, কোনো প্রকার তথ্য তিনি দিতে পারবেন না। হাসপাতাল পরিচালক এ সময় বলেন, ‘হাসপাতালের তথ্য দিয়ে আপনি কী করবেন?’ তখন তাকে জানানো হয় নিউজের জন্য তথ্যগুলো দরকার। গণমাধ্যমকর্মী নিদিষ্ট প্রসেসিং মেইনটেইন করে তথ্য পেতে পারে— এটাও তিনি বুঝতে অপরাগতা জানান।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানদের নিষেধ করে দিয়েছেন তার অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সাথে কেউ কেন কথা বলতে পারবে না। বললে তার বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশনে’ যাবেন পরিচালক।

এদিকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন ঘিরে নেওয়া হয়েছে রহস্যময় নিরাপত্তার জাল। সবখানেই যেন কঠোর গোপনীয়তার ছাপ। ওই আটতলা প্রশাসনিক ভবনে বসেন হাসপাতাল পরিচালক। পাশের রুমে তার পিএ। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন), সহকারী পরিচালক (অর্থ), টেন্ডার বিভাগ, হিসাব বিভাগসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেকশন।

আগের প্রশাসন ভবনের বড় একটি অংশের কাজ চলতো হলরুমে। কয়েক সেকশনের স্টাফরা পাশাপাশি বসে দাপ্তরিক কাজ সারতেন। এখন প্রতিটি সেকশনের আলাদা রুম। দুই-তিনটি সেকশন এক রুমে হলেও সেসব রুমের দরজা বন্ধ থাকে। পিয়নদের সেসব দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, আর এসব গোপন রুমেই চলে অবৈধ লেনদেন। যে যে সেকশনের প্রধান, তিনিই সেই লেনদেন সারেন। ভাগ যায় উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে।

প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, সহকারী পরিচালক (ওএসডি) ডা. মান্নানের জন্য এক রুম ও সহকারী পরিচালক (ওএসডি) ডা. সাহেদার জন্য একটি রুম বরাদ্দ রয়েছে। রয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের জন্য সংরক্ষিত রুম। এছাড়া প্রধান সহকারী হেড ক্লার্ক, সিনিয়র স্টোর অফিসারের জন্য আলাদা রুম বরাদ্দ রয়েছে। তবে তৃতীয় শ্রেণির অফিসিয়াল স্টাফরা একটা রুমের মধ্যেই বসেন।

আগে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে হাসপাতাল পরিচারক বরাবরে আবেদন কিংবা জানালে সংশ্লিষ্ট তথ্য রিপোর্টাররা পেয়ে যেত। অস্বচ্ছল রোগী হাসপাতালের উপ-পরিচালকের সাথে দেখা করে সেবা মঞ্জুর করতে পারতেন। কিন্তু এখন সেসব সুযোগ মেলা দুরূহ। কারণ আটতলার মূল ফটকের সামনেই দুজন আনসার বসে থাকেন। সেখানে প্রথমে জানাতে হয় তিনি কোথায় যাবেন। ভিতরে থাকা আনসারদের ইচ্ছেমাফিক সেই খবর কখনও কখনও পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে সেবাপ্রার্থীদের প্রায় সকলকেই খালি হাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!