বাড়তি হার্টবিটে অবহেলা নয়, বাড়াতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও!

চট্টগ্রাম মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগে আসা ৬০ ভাগই হার্ট ফেইলিওরের রোগী

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বর্হিবিভাগে আসা মোহাম্মদ আলমগীরের সমস্যা হচ্ছে তার হার্টবিট বেশি। অনেক আগে থেকেই তার হার্টবিট বেশি বরাবরই। তিনি মনে করতেন, হয়তো তিনি পরিশ্রম বেশি করছেন কিংবা কখনও কখনও উত্তেজিত হয়ে পড়েন— এজন্য হার্টবিট বেশি হয়ে থাকে। তবু তার খটকা লাগে— প্রায়ই কেন এমন হয়? শেষমেশ ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন তিনি। ডাক্তার ইসিজি-ইকো করে দেখে জানালেন, তার অবস্থা হার্ট ফেইলিওর পর্যায়ে চলে গেছে। আর একইসঙ্গে এও জানিয়ে দিয়েছেন, এর চিকিৎসা চলবে দীর্ঘমেয়াদে। থাকতে হবে টেনশনমুক্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বর্হিবিভাগে হৃদরোগের যেসব রোগী আসেন, তার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই হার্ট ফেইলিওরের রোগী। বর্তমানে প্রতিদিন বর্হিবিভাগে ১২০ থেকে ১৩০ জন রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে।

চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে বাড়তি হার্টবিট বা হৃদস্পন্দন নিয়ে সতর্কতা। কোন্ পর্যায়ে একজন সুস্থ মানুষের হৃদস্পন্দন কত থাকা উচিত তা অনেকেই জানেন না। তাই এটির তারতম্যে হৃদরোগের ঝুঁকি কতটুকু তাও অনেকেরই অজানা। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট ফেইলর রোগীদেরই হার্টবিট বেশি থাকে। কিন্ত সেটি অনেকেরই জানা নেই। তবে এ ধরনের সমস্যা দেখলেই একজন কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে হৃদ্স্পন্দনের হার স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ৭২। ব্যক্তিবিশেষে হৃদ্স্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে সর্বনিম্ন ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ বারও হতে পারে। এক্ষেত্রে ৬০-এর নিচে হলে কম এবং ১০০-এর বেশি হলে স্পন্দন বেশি ধরে নিতে হবে।

কিন্তু এই হিসাবটাই সাধারণ মানুষ জানে না। অনেকের ১০০ এর উপরে ১১০ পর্যন্ত গেলেও তা থেকে যায় অজানা। সেজন্য হৃদস্পন্দন মাপার প্রয়োজন বোধও করা হয় না। তবে যারা পেশাগতভাবে খেলাধুলা কিংবা শরীরচর্চা করেন, তাদের হৃদ্স্পন্দনের হার অপেক্ষাকৃত কম হয়। কিন্তু হৃদ্স্পন্দনের হার বেশি বা কম হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বিচক্ষণতার পরিচয়।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিকের তুলনায় কম বা বেশি হওয়া মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। হৃদ্স্পন্দনের হারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা হ্রাস একাধিক অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। হৃদ্স্পন্দনের হার মিনিটে ৬০ বারের থেকে কমে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্রাডিকার্ডিয়া বলা হয়। আবার হৃদস্পন্দনের হার ১০০ বারের থেকে বেড়ে গেলে তাকে বলে ট্যাকিকার্ডিয়া।

তারা বলছেন, হৃদ্স্পন্দনের হার কম হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। যেমন,হৃদ্স্পন্দনের হার কমে যাওয়া হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। হৃদযন্ত্রের যে অংশটি হৃদ্স্পন্দনের উৎস, তার নাম সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড। এই সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড সঠিকভাবে কাজ না করলে হৃদ্স্পন্দনের হার কমে যেতে পারে। এছাড়াও টাইফয়েডের মতো কিছু রোগের ফলেও হৃদ্স্পন্দনের হার কমে যায়। আবার থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করলেও কমতে পারে হৃদ্স্পন্দনের হার। রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলেও হৃদযন্ত্রে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, হৃদ্স্পন্দনের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলেও সেটি ডেকে আনতে পারে বিপদ। ফলে যে সব অসুখে হৃদ্স্পন্দনের হার বাড়ার ঝুঁকি থাকে, সে সব সময়ে বেশি সতর্ক হতে হবে।এছাড়াও যে কোনও ধরনের জ্বরে হৃদ্স্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সংবহনতন্ত্রের সমস্যা থাকলে বেড়ে যেতে পারে হৃদ্স্পন্দনের হার। রক্তস্বল্পতা ও হাঁপানির মতো সমস্যাও হৃদ্স্পন্দনের হার বাড়িয়ে দিতে পারে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. শ্রীপতি ভট্টাচার্য্য অপু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হৃদ্স্পন্দনের অস্বাভাবিক হার হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। মূলত হার্টফেইলর রোগীদেরই হার্টবিট বেশি থাকে।’

তিনি বলেন, ‘যেসব রোগী এসে বলে তাদের হার্টবিট বেশি তাদের প্রথমে আমরা ইসিজি করাই। পরে এক্সরে, এমনকি প্রয়োজন হলে ইকো করাই। তখন বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। তখন আমরা চিকিৎসা শুরু করি। কিন্তু অনেকেই বিষয়টাকে আমলে নেয় না। তাই কারও যদি স্বাভাবিক শোয়া কিংবা বিশ্রামে হার্টবিট ১০০-এর উপরে ১১০ পর্যন্ত যায়, অবশ্যই তাকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে হবে।’

ডা. শ্রীপতি ভট্টাচার্য্য অপু বলেন, ক্লান্তি, ঝিমুনি, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট— এ সবই হৃদরোগের লক্ষণ। তাই এই ধরনের সমস্যা উপেক্ষা করা একেবারেই অনুচিত।

তিনি এও বলেন, ‘বর্তমানে হৃদ্স্পন্দন মাপার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ায় প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রযুক্তির মধ্যে দিয়েই এর পরিমাপ সম্ভব। কাজেই যদি এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!