চট্টগ্রাম বন্দরে ‘দেলোয়ার সমিতি’র রমরমা সুদের ব্যবসা

ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে ২০০ লোক

চট্টগ্রাম বন্দরের খালাসি পদে কর্মরত রয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। তার সহচর হিসেবে রয়েছে আরও তিন-চারজন। তারা প্রত্যেকেই বন্দরের নিজস্ব কর্মচারী। কর্মস্থলে এসে উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করে দাপ্তরিক কাজের পরিবর্তে তারা পরিচালনা করেন ‘দেলোয়ার সমিতি’ নাম দিয়ে সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবসা। একটি নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে বন্দরের নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম বেতনের টাকা দেওয়াই তাদের মূল ব্যবসা। জামানত হিসেবে রাখা হয় ব্যাংকের একটি অগ্রিম চেক। ওই চেকের মাধ্যমেই ঋণ নেওয়া ব্যক্তির বেতন ও বোনাস ও অন্যান্য ভাতার টাকা তুলে নেয় তারা। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলছে এই অবৈধ ব্যবসা। তাদের ফাঁদে পড়ে সুদের বোঝায় অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

অভিযুক্তরা হলেন চট্টগ্রাম বন্দরের মেরিন বিভাগের লস্কর মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৬), প্রকৌশল বিভাগের খালাসী আব্দুল মান্নান (৪০), প্রকৌশল বিভাগের এসএস টেন্ডার আবুল কালাম আজাদ (৪২) এবং মেরিন বিভাগের লস্কর শামসুল হক টুকু। এরা সবাই দেলোয়ারের সহকারী।

দেলোয়ার সমিতির ঋণের ফাঁদে পড়ে ৮-৯ বছর ধরে বেতন ও বোনাস ওভারটাইমের টাকার মুখ দেখছেন না অনেকেই। এদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কারখানার সেকেন্ড গ্রান্ড মেকানিক আব্দুল খালেক, বন্দরের পরিবহন বিভাগের কর্মচারী প্রদীপ কুমার মালি, যান্ত্রিক বিভাগের আলমগীর শাহদাত, পরিবহন বিভাগের কর্মচারী বিপ্লব সরকার।
চট্টগ্রাম বন্দরে ‘দেলোয়ার সমিতি’র রমরমা সুদের ব্যবসা 1
ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক বলেন, ‘সংসারের পড়ে গত প্রায় ৯ বছর আগে ৩৫ হাজার ঋণ নিয়েছিলাম। এরপর থেকে আমার চেকবই দেলোয়ারের কাছে বন্ধক রাখা হয়। মাস শেষে আমার বেতনের সমস্ত টাকা তুলে নেয় দেলোয়ারের লোকজন। বছরের পর সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হচ্ছে না সেই ৩৫ হাজার টাকার ঋণ। তার কারণে বছরের বোনাসটাও চোখে দেখি না। বন্দরের শ্রমিক হিসেবে আমার পরিচয় হলেও কিন্তু আমার সমস্ত পারিশ্রমিক তুলে নেয় তার দেলোয়ার সমিতির লোকজন।’

একাধিক ভূক্তভোগীরা বলেন, ‘এক লাখে সুদ নেয় ১০ হাজার টাকা। কারো বেতন যদি ২০ হাজার হয়, সেখানে ২ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম বেতন দেয় দেলোয়ার। সেখানে আমাদের কাছ থেকে জমা রাখে স্বাক্ষর করা একটি চেক। ওই চেক দিয়ে মাস শেষে ঋণের টাকা সংগ্রহ করে দেলোয়ারের লোকজন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরের ভেতরে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনসহ মোট তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় আরও বন্দরের আর কেউ জড়িত কী না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের গ্যারেজের পেছন থেকে তাদের আটক করে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) একটি টিম। ওই সময় ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট রশিদ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৯ ও নগদ ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪০০ টাকাসহ মোট ৪২ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৯ টাকা সহ ১৬৮ টি টাকা সংখ্যাবিহীন স্বাক্ষর করা চেক জব্দ করা হয়। এছাড়া ৬টি চেক বই ও ১০০ টাকার মূল্যের ৩০টি প্রাইজবন্ড পাওয়া যায়। ওইদিন আটককৃতদের প্রথমে পুলিশের কাছে হস্তাস্তর করার মাঝপথে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে তাদের নেয়া হয় বন্দর নিরাপত্তা বিভাগের দফতরে। ২০ জুলাই আটক তিনজনের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!