চট্টগ্রামে সদস্য বাড়াতে মরিয়া হিজবুত তাহরীর, বিএনসিসিতে বিশেষ নজর

চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে গোপনে সক্রিয় রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর। খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিতে বিভিন্ন উপায়ে সদস্য রিক্রুট করছে তারা। এই কাজে তাদের বিশেষ নজর রয়েছে বিভিন্ন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর সদস্যদের ওপর।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আমেনা বেগম। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হিজবুতের ১৫ সদস্য আটকের ঘটনায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিএমপি।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান (আঞ্চলিক প্রধান) আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলমসহ (৩৯) আরও ১৪ জনকে আটক করে পুলিশ। জানা গেছে, এরশাদুল আলম চট্টগ্রামের একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

গ্রেফতার ১৫ জনের মধ্যে দুজন বিএনসিসি সদস্যও রয়েছেন।
গ্রেফতার ১৫ জনের মধ্যে দুজন বিএনসিসি সদস্যও রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার ১৫ জনের মধ্যে দুজন বিএনসিসি সদস্যও রয়েছেন। হিজবুতে সক্রিয় থাকা সেই দুই বিএনসিসি সদস্য হলেন কামরুল হাসান রানা ও মো. আরিফুল ইসলাম। দুজনের বয়সই বিশের কোঠায়।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে কাজ করছে হিজবুত তাহরীর। এছাড়া বিএনসিসির প্রতিও বিশেষ নজর রয়েছে তাদের। এই কাজে শিক্ষার্থীদের রিক্রুটে তারা শিক্ষকদেরও ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থী হিজবুতে কাজ করে তাদেরকে পড়তে যাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বের হয়ে সাংগঠনিক কাজ করার পরামর্শও দিতেন শিক্ষকরা। এজন্য অভিভাবকদের প্রতি আমি অনুরোধ করবো আপনারা আপনাদের সন্তানদের প্রতি সচেতন হন। তারা কোন শিক্ষকের কাছে পড়ছে সে শিক্ষকের ব্যাপারেও খোঁজখবর রাখুন।

হিজবুত তাহরীর সদস্যদের কাছ থেকে নগদ দুই লাখ ৮২ হাজার টাকা ছাড়াও মিলেছে ট্রেনিং ম্যানুয়েল।
হিজবুত তাহরীর সদস্যদের কাছ থেকে নগদ দুই লাখ ৮২ হাজার টাকা ছাড়াও মিলেছে ট্রেনিং ম্যানুয়েল।

আমেনা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কোতোয়ালী এলাকায় পোস্টার-লিফলেট বিলি করছিল হিজবুত। ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নগরীর আন্দরকিল্লা মসজিদ এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে মুসল্লিদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা অবস্থায় ওয়ালিদ ইবনে নাজিম (১৮) ও ইমতিয়াজ হোসাইন (২৫) নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের দুজনই শিক্ষার্থী। ফিজিক্স প্রাইভেট পড়ার নাম করেই বাসা থেকে বের হয়েছিল তারা। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৫টি টিমে ভাগ হয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আটক অন্যরা হলেন আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ (৩০), নাসিরুদ্দিন চৌধুরী (২৯), নাজমুল হুদা (২৭), লোকমান গণি (২৯), মোহাম্মদ করিম (২৭), আব্দুল্লাহ আল মুনিম (২২), কামরুল হাসান রানা (২০), আরিফুল ইসলাম (২০), আজিমুদ্দিন (৩১), মো. আজিমুল হুদা (২৪), আফজাল হোসেন আতিক (৩৫), মো. সম্রাট (২২)।

এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ দুই লাখ ৮২ হাজার টাকা, প্রচারপত্র, প্রেস রিলিজ, গঠনতন্ত্র, ট্রেনিং ম্যানুয়েল, দুটি ল্যাপটপ ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের উপ কমিশনার(দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান, অতিরিক্ত উপ কমিশনার(দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ, কোতোয়ালি জোনের এসি নোবেল চাকমা, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!