জানে আলমের মদের কারখানায় হঠাৎ পা পড়লো পটিয়া থানা পুলিশের। কালারপুল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের নেতৃত্বে ‘ঝটিকা অভিযানে’ উদ্ধার হল দেড় হাজার লিটার মদ। ঘটনাস্থল থেকে আটকও হলেন কয়েকজন মাদকব্যবসায়ী। এরপরই ঘটতে থাকে অভিনব সব ঘটনা। শুরুতে অর্থের বিনিময়ে তাৎক্ষণিক ছাড়া পেয়ে গেলেন মাদকব্যবসায়ীরা। এরপর ঘটলো আরও অভিনব কাণ্ড। উদ্ধার করা দেড় হাজার লিটার মদ উপযুক্ত মূল্যে মাদককারবারিদের কাছেই বিক্রি করে দিল অভিযান চালানো পুলিশ।
এমন অভিযোগে এলাকাজুড়ে বইছে চাপা অসন্তোষ। জানা গেছে, ১১ নভেম্বর বিকেল তিনটার দিকে পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের লাখাড়া এলাকার সাইর মেম্বারের বাড়ির পাশের নির্জন এলাকায় চিহ্নিত মদব্যবসায়ী জানে আলমের মদের কারখানা থেকে প্রায় দেড় হাজার লিটার মদ উদ্ধার করে পটিয়া থানার কালারপুল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হানিফের নেতৃত্বে একটি দল। ওই অভিযানে মদ উদ্ধারের দুটি ভিডিওচিত্র চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সংগ্রহে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উদ্ধারের ১২ দিন পরও এ ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ দাবি করেছে, পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব মালামাল উদ্ধারের কারণে মামলা হয়নি।
স্থানীয় সূত্র বলছে, চিহ্নিত মাদককারবারি জানে আলমের সঙ্গে পটিয়া থানার যোগসাজশের কারণেই মামলা হয়নি। প্রায় দেড় হাজার লিটার মদ উদ্ধারের ১১ দিন পর পুলিশ জানায়, পরিত্যক্ত অবস্থা থেকে ওই মদ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো এও নিশ্চিত করেছে, ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে মাদক কারবারিদের আটক করা হলেও মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, সেদিন আটক ওইসব কারবারিদের কাছেই আবার বিক্রি করা হয়েছে উদ্ধার করা প্রায় দেড় হাজার লিটার মদ।
জানা যায়, পটিয়া থানাধীন লাখাড়া এলাকায় তাসকির আলমের পুত্র মাদক ব্যবসায়ী জানে আলম ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ওই এলাকায় চালিয়ে আসছে অবৈধ মদের কারখানা। প্রায় ৬ মাস ধরে ওই এলাকার শামীমসহ বড় একটি সিন্ডিকেট এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, দুর্ধর্ষ এই মাদক সিন্ডিকেটের উঠাবসা থানার কর্তাব্যক্তিদের সাথে। সম্পর্ক ঠিক রাখতে হয় অর্থের লেনদেনও। তাই দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটটি এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে।
মাদক উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে পুলিশের ভেতরেই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে পটিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উদ্ধারকৃত মদগুলো থানায় আছে। কিন্তু পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার কারণে কোন মামলা হয়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসআই হানিফের প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রতিবেদককে রুঢ় স্বরে তিনি বলেন, ‘আপনি আমার নির্দেশে অভিযান পরিচালিত হয়েছে এমন বলছেন কেন? এ অভিযান চালিয়েছে এসআই হানিফ। আপনি তার সাথে যোগাযোগ করেন।’
তবে এ ব্যাপারে অভিযান পরিচালনাকারী এসআই হানিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে সেদিনের ঘটনায় কোনো মদ উদ্ধার করা হয়নি বলে জানান।
মদ উদ্ধারের বিষয়ে ওসির স্বীকারোক্তির কথা জানালে তিনি বলেন, ‘হয়তো ওসি সাহেবের ভুল হতে পারে, সেদিন মদ উদ্ধারের কোন ঘটনা ঘটেনি।’
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে সেদিনের মদ উদ্ধারের ভিডিও ফুটেজ থাকার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘সেদিন অনেক ঝামেলা ছিল। অভিযানে অনেকেই ছিল, সবকিছু ওলটপালট ছিল।
এএ/সিপি