চট্টগ্রামে শিশুকে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা, তিন আসামিকে ফাঁসির আদেশ

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফকে হত্যার দায়ে তিন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৮ মে) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিতরা হলেন- মো. ফরিদ, মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগম।

বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য।

তিনি জানান, গত ৩০ মার্চ এ মামলায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত থাকলেও তা হয়েছিল না। নতুন দিন ঠিক করা হয়েছিল ২৮ এপ্রিল। কিন্তু এক আসামি শিশু আরাফের বাবা-মায়ের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে রায় পিছিয়ে যায়।

সেই আবেদন নাকচ করে বিচারক তিন আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে বুধবার রায় দিয়েছেন। রায়ের সময় আসমিরা উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ জুন ওষুধ কোম্পানীতে চাকুরিরত আব্দুল কাইয়ূমের দুই বছরের শিশু আরাফকে হত্যা করা হয়।

একইদিন বাকলিয়া থানার ম্যাচ ফ্যাক্টরী রোডে নুরুল আলম মিয়ার বাড়ির ছাদে ট্যাংক থেকে আবদুর রহমান আরাফের (২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পূর্বশত্রুতার জের ধরে বাকলিয়া থানার দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে তার বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার শিশু আবদুর রহমান আরাফ হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন আসামী মো. হাসান।

এর আগে হাসানের মা নাজমা বেগমও গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

গত বছরের ১৪ জুন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে মো. হাসান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এর আগে আরাফ হত্যার ঘটনায় হাসান ও অন্য আসামী ফরিদকে গ্রেপ্তার করেছিল বাকলিয়া থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর আদালত তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দীন তখন জানিয়েছিলেন, আরাফ হত্যা মামলায় হাসানকে রিমান্ডে আনা হয়েছিল। রিমান্ডের চতুর্থ দিনে হাসান ঘটনার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চায়। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে হাসানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

তখন তিনি জানান, ফরিদের সঙ্গে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়ার পূর্ব থেকে বিরোধ ছিল। গ্রেপ্তার হাসান আরাফের হত্যাকারী নাজমা বেগমের ছেলে।

আবদুর রহমান আরাফ নুরুল আলম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুল কাইয়ুমের ছেলে।

নাজমা বেগম কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এলাকার তাজুনুর ইসলাম প্রকাশ বাবুলের স্ত্রী। তিনি বাকলিয়া থানা এলাকার ম্যাচ ফ্যাক্টরী রোডে নুরুল আলম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

জবানবন্দিতে নাজমা বেগম উল্লেখ করেছিলেন, নুরুল আলম মিয়াকে ফাঁসাতে ফরিদ নামে একজনের প্ররোচনায় এ হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। তিনি আর্থিকভাবে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন, ফরিদ তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করেন।

তখন নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে আরও বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে ঘটনার দিন বিকেলে ভবনের ছাদে নিয়ে গিয়ে পানির ট্যাংকেতে ফেলে হত্যা করা হয়।

নাজমা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ঘটনার সময় নাজমার ছেলে ভবনটির দারোয়ান মো. হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ভবনটির মালিক।

আইএমই/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!