চট্টগ্রামে বাইক চুরির বড় চক্র পুলিশের কব্জায়, মহেশখালী থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত নেটওয়ার্ক (ভিডিও)

১৩টি মোটরসাইকেলসহ তিন মূলহোতা ধরা

চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা রিপন মোটরসাইকেলের বড় চোর। শুধু এই অপরাধেই তার বিরুদ্ধে মামলা আছে অন্তত আটটি। মামলায় হাজিরা কিংবা উকিলের সঙ্গে দেখা করতে তাকে প্রায়ই আসতে হয় চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে। আর যখনই যাস, তিনি প্রতিবারই কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় পার্ক করে রাখা অন্তত একটি মোটরসাইকেল চুরি করে হাওয়া হয়ে যান। তার কাছে আছে বিশেষ কায়দায় তৈরি একটি ‘ম্যাজিক’ চাবি— যা দিয়ে মোটরসাইকেলের যে কোনো তালা খুলতে সময় লাগে কয়েক মিনিট মাত্র।

চোরাই এই মোটরসাইকেল বিক্রি বা হাতবদলের ধরনটিও বেশ অদ্ভূত। রিপন চট্টগ্রাম থেকে চুরি করা মোটরসাইকেল কুমিল্লার আরেক চোরের কাছে বিক্রি করেন। কুমিল্লা থেকে ফেরার সময় সেখান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে সেটা বিক্রি করেন কক্সবাজারের মহেশখালীতে। আবার সেখান থেকে ফেরার সময় যে মোটরসাইকেলটি চুরি করেন, সেটি কুমিল্লায় নিয়ে বিক্রি করে দেন। ফলে এসব চোরাই মোটরসাইকেলের খোঁজ পাওয়াটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

চট্টগ্রামে বাইক চুরির বড় চক্র পুলিশের কব্জায়, মহেশখালী থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত নেটওয়ার্ক (ভিডিও) 1

নিপুণ কৌশলে চট্টগ্রাম নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে বাইক চুরির সঙ্গে জড়িত এই চক্রের তিন মূলহোতা অবশেষে ধরা পড়লো নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে। তাদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করা হয় ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল। সংঘবদ্ধ এই চোরচক্র বরাবরই পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে একের পর এক বাইক চুরির ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছিল।

একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর কোতোয়ালী থানা পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে বাইক চুরির এই চক্রটিকে ধরতে ওঠেপড়ে লাগে। সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা, কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার অতনু চক্রবর্তী ও কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবিরের তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নূরুল বাশারের নেতৃত্বে এসআই মিজানুর রহমান চৌধুরী, এসআই মেহেদী হাসান, মোশাররফ হোসাইন, নয়ন বড়ুয়ার টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান।

এরই এক পর্যায়ে বুধবার (৪ অক্টোবর) সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী এলাকার মেরিনার্স রোডে এস আলম বাস ডিপোর বিপরীত পাশ থেকে বাইক চোরচক্রের মূল হোতা রিপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময়ই রিপনের কাছ থেকে একটি চোরাই ‘অ্যাপাচি আরটিআর’ মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

৩২ বছর বয়সী রিপন পটিয়ার কোলাগাঁও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল আলীমের ছেলে। তার বর্তমান বাসস্থান বাকলিয়া এলাকার বাস্তহারা চুনার গলি এনাম কলোনিতে। রিপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মোটরসাইকেল চুরির অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। নগরীর কোতোয়ালী, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, পটিয়া ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ফেনী সদর থানা ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানায়।

অভিযানে অংশ নেওয়া কোতোয়ালী থানার এসআই মেহেদী হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, কোর্ট বিল্ডিং এলাকাই শুধু নয়, চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, পটিয়া ছাড়াও এই চক্রটির বাইক চুরির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ফেনী ও কুমিল্লা পর্যন্ত।

তিনি বলেন, ‘বাইক চুরির পর চোরচক্রের সদস্যরা বাইকগুলো প্রধানত নিয়ে যায় কক্সবাজারের মহেশখালীতে। কিছু কিছু বাইক কুমিল্লার একটি নির্দিষ্ট এলাকায়ও নিয়ে যাওয়া হয়। কুমিল্লার অভি এবং কক্সবাজারের মহেশখালীর সজীবই মূলত চুরির বাইকগুলো কিনে নেন।’

রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কোতোয়ালী থানা পুলিশের টিম দ্রুতই অভিযানে নামে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট এলাকায়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চোরচক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের চিওড়া ডিমাতলীর মৃত মনু মিয়ার পুত্র আব্দুল কাদের জিলানী অভিকে। ২৬ বছর বয়সী এই যুবকের ডেরা থেকে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৮টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আব্দুল কাদের জিলানী অভির বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও ফেনীর সোনাগাজী থানায় কমপক্ষে পাঁচটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কোতোয়ালী থানা পুলিশ এরপর অভিযান চালায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানা এলাকায়। সেখানে ধরা পড়ে চোরচক্রের অন্যতম এক হোতা— মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি মনহাজীর পাড়ার মোস্তাক আহমেদের পুত্র সজিবুল ইসলাম (২১)। তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৪টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!