চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মৃত রোগীর তথ্য দিতে প্রাইভেট হাসপাতালে ‘রহস্যের’ লুকোছাপা

মৃত্যুর ১৫ দিন পর তথ্য দিয়েছে সিএসসিআর

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সঠিক তথ্য দিতে গড়িমসি করছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার একটি প্রতিবেদন দেওয়া হলেও সেখানে প্রায় সময় থাকছে কয়েকদিন আগের পুরোনো তথ্য৷ আর এজন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে। এতে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

সরকারি হাসপাতালগুলো প্রতিদিনের তথ্য দিলেও বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য মেলে দু-তিনদিন পর। এমনকি ১৫ দিন পর গিয়ে সিভিল সার্জন অফিসে তথ্য পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম নগরী বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআর।

রোববার (২০ আগস্ট) রাতে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান পুলিশ সদস্য এমদাদুল হোসেন (৩১)। কিন্তু এই মৃত্যুর রিপোর্ট পরেরদিন সোমবার সিভিল সার্জন অফিস দিতে পারেনি। মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে এটি উল্লেখ করা হয়। এমনকি প্রতিবেদনে নাম নিয়েও সংশয় তৈরি হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে এমদাদুলের মৃত্যুর খবর জানা গেলে খোঁজ নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। কিন্তু প্রথমে এভারকেয়ার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বীকার করতে চায়নি। পরে হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার আলী নেওয়াজ সাব্বির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তখন তিনি রোগীর নাম বলেছিলেন এমাদুল ইসলাম।

একই রকম ঘটনা ঘটে ইউনিয়ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার কর্মকর্তা মোজাহের মাওলার মৃত্যু প্রতিবেদনে। মৃত্যুর প্রায় চার থেকে পাঁচদিন পর সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিবেদনে মৃত্যুর তালিকায় তার নাম যোগ করা হয়।

বিষয়টি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের কীটতত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা ঠিকমতো তথ্য পাঠাতে চায় না। একদিনের তথ্য অন্যদিন পাঠায়। বিষয়টি সিভিল সার্জন স্যারকে অবহিত করেছি। দেখি স্যার কি পদক্ষেপ নেন।’

এর আগে এক প্রতিবেদনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু দেখিয়েছিল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস। তবে এই তথ্যটি প্রতিবেদনে জানানো হলেও একজন রোগীর মৃত্যুর হয়েছিল ১৫ দিন আগে। ৫৩ বছর বয়সী সিতারা জাহান নামের সেই রোগীর মৃত্যু হয়েছিল ২৯ জুলাই ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। সিএসসিআরে গত ২৮ জুলাই ভর্তি হন তিনি।

প্রায় ১৫দিন পর সিএসসিআরের রিপোর্ট কেন আপডেট তথ্য তালিকায় রাখা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে কীটতত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস সেসময় বলেন, ‘আমরা সিএসসিআরকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা ডেঙ্গুর রোগীর পরিসংখ্যানটা আমাদের পাঠায় না। আমরা অফিসে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি ফরম্যাট। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি, তারা বলে ফরম্যাট পায়নি। আমরা ১৫ দিন আগের তথ্য পেয়েছি, আর সেটাই যোগ করেছি প্রতিবেদনে।’

একই অবস্থাও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালেরও। ওই হাসপাতালে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর রিপোর্টও কয়েকদিন পর পাঠানো হয় সিভিল সার্জন অফিসে।

রিপোর্ট দেরীতে পাঠানোর বিষয়ে কথা হয় সিএসসিআরের সিইও সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো রোগীর মৃত্যু হলে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ ও পরিচয় নিশ্চিত হতে হয়। এটি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সব ফরমালিটি শেষ করতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তাই তৎক্ষণাৎ আপডেট তথ্য আমরা দিতে পারি না। তবে মৃত্যু তথ্য আমরা লুকাই না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!