চট্টগ্রামে খাল উদ্ধারের নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ সিডিএর বিরুদ্ধে

মালামাল রাখতে বিল্ডিং ভেঙে জায়গা চায় সিডিএ

চট্টগ্রামে খাল উদ্ধার প্রকল্পের অধীনে অবৈধ জায়গা উচ্ছেদ করে যেমন প্রশংসা কুড়াচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), তেমনি আবার এর সুযোগ নিয়ে সিডিএরই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগও উঠছে।

এমনই এক ঘটনায় দেখা গেছে, একবছর আগে খাল প্রশস্ত করার স্বার্থে ভূমিমালিক নিজের ৪ ফুট জায়গা নিজ খরচে ভেঙে সিডিএর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালককে বুঝিয়ে দেওয়ার পর একবছর পর আবার এসে শুধুমাত্র নিজেদের মালামাল রাখার জন্য বিল্ডিং ভেঙে আরও ৬ ফুট জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোর খাটানো হচ্ছে। অথচ বিল্ডিংয়ের জায়গাটি খালের অংশেও পড়েনি। ওই প্রস্তাবে রাজি না হলে বিল্ডিং ভেঙে ফেলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এমন হুমকির মুখে ওই বিল্ডিংয়ে বসবাসকারী ২০টি পরিবার প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর লাভলেইন আবেদীন কলোনির এক বাসিন্দার বৈধ জায়গায় গড়ে ওঠা একটি বিল্ডিং ভেঙে সেখানে সাময়িক একটি ওয়ার্কস্টেশন বানানোর কথা বলে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভূমিমালিককে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সিডিএর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে অনৈতিক হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

এ নিয়ে প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগী ভূমিমালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেছেন।

ভূক্তভোগী রাজিবুল আকবর জানান, এনায়েত বাজার মৌজার অন্তর্ভুক্ত লাভলেইন আবেদীন কলোনির প্রায় ১০ কাঠা জায়গা পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে তিনি ভোগদখলে আছেন। এই অবস্থাতেই ২০২২ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জামালখান খাল উদ্ধার প্রকল্পের অধীনে খাল প্রশস্ত করার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে বললে তিনি ওই জায়গায় গড়ে তোলা বিল্ডিং থেকে ৪ ফুট জায়গা নিজ খরচে ভেঙে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালককে বুঝিয়ে দেন।

কিন্তু এর প্রায় এক বছর পর হঠাৎ করে গত ১৫ জানুয়ারি বেলা ২টার দিকে একই প্রকল্পের বেশ কিছু লোক রাজিবুল আকবরের জায়গায় ঢুকে আরও কিছু জায়গা খালের জন্য দাবি করে। তারা ওয়ার্কস্টেশন করার জন্য রাজিবুল আকবরের জায়গার ওপর গড়ে ওঠা বিল্ডিং ভেঙে ৬ ফুট জায়গা সিডিএ বরাবর বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিল্ডিংয়ের জায়গাটি খালের অংশ না হওয়ায় ভূমিমালিক রাজিবুল আকবর তাতে অসম্মতি জানান।

রাজিবুল আকবর অভিযোগ করে বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি সিডিএর সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) দীপক বড়ুয়া লিখিত কোনো নোটিশ ছাড়াই এসে মৌখিকভাবে হুমকি দিয়ে যান, ওই তারিখের মধ্যে বিল্ডিং ভেঙে তাদের দাবিকৃত জায়গা বুঝিয়ে না দিলে ১৮ জানুয়ারি বিল্ডিং ভেঙে ৬ ফুট জায়গা নিয়ে নেওয়া হবে। এর পর থেকে ওই বিল্ডিংয়ে বসবাসকারী ২০টি পরিবার প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।

ভূমিমালিক রাজিবুল আকবর জানান, ‘বিল্ডিংটি বৈধ জায়গায় বৈধভাবে সকল নিয়মকানুন মেনে স্থাপন করা হয়েছে। এমন একটি স্থাপনা এভাবে ক্ষমতার জোরে ভেঙে দিলে আমার পরিবার পরিজনসহ রাস্তায় বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।’

রাজিবুল আকবর বলেন, ‘যেহেতু বিল্ডিংয়ের জায়গাটি খালের আওতাধীন নয়, সেহেতু সাময়িকভাবে ওয়ার্কস্টেশন করার জন্য যে বিল্ডিং ভেঙে ৬ ফুট জায়গা দাবি করা পুরোপুরি অবৈধ ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী দীপক বড়ুয়া বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলছে। অবৈধ ভবনগুলো উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা যাবে— এই খবরটি জানাতে সেখানে যাওয়া। এটি আমাদের অফিসিয়াল কাজ। সেখানে কেন আমি তাকে হুমকি দেব?’

ভুক্তভোগী ভূমিমালিক অভিযোগের বিষয়টি লিখিতভাবে জানালেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক আহম্মদ মঈনুদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগের কথা আমি শুনিনি। তবে বিএস দাগ অনুয়ায়ী খালের জায়গায় ভবন নির্মাণ করলে সেটি উচ্ছেদে অভিযান চলছে। উচ্ছেদ করে আমরা সেনাবাহিনীকে জায়গা বুঝিয়ে দিচ্ছি। অভিযানে সিডিএর পক্ষ থেকে তিনি (দীপক বড়ুয়া) থাকছেন। সেজন্য হয়তো তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগ করছেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!