চট্টগ্রামে ঈগলের ঝাপটায় ডুবলো দুই নৌকা, কেটলির ভারে শেঠের শোচনীয় হার

দলীয় প্রতীক পেয়েও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে পারেননি চট্টগ্রামের দুই নৌকার মাঝি। এই দুই প্রার্থীর সঙ্গে নৌকার আরেক ‘ভাড়াটে’ মাঝিরও পরাজয় হয়েছে। সেই হিসেবে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত তিন প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। সাতকানিয়া, বাঁশখালীতে নৌকার সঙ্গে ডুবেন বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের আওয়ামী লীগের সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থীও।

রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রথমে ১৬ আসনের প্রত্যকটিতে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও পরে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে হাটহাজারীতে নৌকার পরিবর্তে লাঙ্গল প্রতীকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনে নৌকার নোমান আল মাহমুদের পরিবর্তে লাঙ্গলের মো. সোলায়মান আলম শেঠকে সমর্থন জানায় আওয়ামী লীগ।

তবে হাটহাজারীর আনিসুল ইসলাম নৌকাতে উঠে নির্বাচনী বৈতরণী পার করলেও ডুবে যান বোয়ালখালী আসনের শেঠ। সরকারদলীয় সমর্থন পেয়েও ভরাডুবি হয় জাতীয় পার্টির এই নেতার। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের আবদুচ ছালামের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারেন শেঠ।

চট্টগ্রাম ১৫ আসনে (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) নৌকার প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে নামেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। দলীয় সমর্থন পেলেও কূলে তরী ভিড়াতে পারেননি নদভী। ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাতকানিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল মোতালেবের কাছে হারেন নদভী। মোতালেবের ঈগলের ঝাপটায় ডুবে যায় নদভীর নৌকা।

এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নদভী পান ৩৯ হাজার ২৫২ ভোট। আর ঈগল প্রতীকের মোতালেব পান ৮৫ হাজার ৬২৮ ভোট।

নির্বাচনের আগে নদভীকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে দলীয়প্রধান বরাবর লিখিত আবেদনও জানান সাতকানিয়া লোহাগাড়া উপজেলার নেতারা। দলীয় কর্মীদের উপেক্ষা, জামায়াতঘেঁষা স্বভাব ও পরিবারতন্ত্রের কারণে একাধিকবার সমালোচিত হন এই সাংসদ। তারপরও দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন তিনি। কিন্তু দু’দফার পর আবারও নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় অনেকটা ‘বিদ্রোহ’ করেন এই আসনের নেতাকর্মীরা। নদভীর পরিবর্তে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবকে সমর্থন জানায় তৃণমূলের কর্মীরা। আর তৃণমূলের এই সমর্থন ডুবিয়েছে নদভীর নৌকা।

সাতকানিয়ার মতো বাঁশখালীতেও নৌকা ডুবিয়েছে ঈগল। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের (বাঁশখালী) প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ভোটযুদ্ধে হেরে যান। আর জয়ের মালা পড়েন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান সিআইপি।

এই আসনে নৌকা প্রতীকের মোস্তাফিজ ভোট গণনা হয়নি। এখানে ঈগল প্রতীকে মুজিবুর রহমান পান সর্বোচ্চ ৫৭ হাজার ৪৯৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক) পান ৩২ হাজার ২২০ ভোট।

দলীয় সাধারণ সম্পাদককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, মুক্তিযুদ্ধাদের ওপর হামলা, অস্ত্র হাতে এলাকায় শোডাউনসহ নানা ইস্যুতে বেশ আগ থেকেই সমালোচিত ছিলেন বাঁশখালীর এই সাংসদ।

তাই তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন—সবার এমন ভাবনাকে ব্যঙ্গ করে ফের নৌকার টিকিট হাতিয়ে নেন তিনি। এই আসনে একইসঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমানও। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভোটে সাংসদ হচ্ছেন তিনি।

এদিকে মনোনয়ন পেয়েও সমালোচিত হতে ভুলেননি মোস্তাফিজ। মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন নিজেই। এই ঘটনায় মামলার আসামি হন তিনি। তারপরও শুধরাতে পারেননি বাঁশখালীর মোস্তাফিজ। নির্বাচনী প্রচারণায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি, এমনকি ভোট চলাকালে পুলিশের হাত কেটে নেবেন বলে বেশ সমালোচিত হন তিনি।

নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দেওয়ায় মোস্তাফিজের প্রার্থীতাই বাতিল করে দেন নির্বাচন কমিশন। ফলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে মোস্তাফিজের নৌকা ডুবিয়ে সংসদের টিকিট নিশ্চিত করেন মুজিবুর।

নির্বাচনের সময় নিজ জন্মস্থান সরল ইউনিয়নেও অপদস্থ হন মোস্তাফিজ। উত্তর সরল কেন্দ্রটি দখলের চেষ্টা করেন মোস্তাফিজ। সেখানে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এসময় তার গাড়ি ভাঙচুর করেন স্থানীয়রা। এরপর কেন্দ্রেই অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন তিনি।

এরপর বিকাল ৪টার দিকে মোস্তাফিজ কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময় ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। তখন তার গাড়ির সামনের ও পেছনের গ্লাস ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা জাতীয় পার্টির মো. সোলায়মান আলম শেঠ পেয়েছেন ৬ হাজার ২৫৮ ভোট। এই আসনে সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ২৬৬ ভোট পান স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের আবদুচ ছালাম।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!