চট্টগ্রামের পটিয়ায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ মাসে ২ কোটি টাকার গরু ডাকাতি

চট্টগ্রামের পটিয়ায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গত চার মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার গরু-মহিষ নিয়ে গেছে ডাকাতচক্র। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন খামারে গিয়ে কেয়ারটেকার ও দারোয়ানকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাত-পা বেঁধে মাইক্রোবাসে করে এসব গরু-মহিষ লুট করে নিয়ে যায় তারা।

আর এতে বিপাকে পড়েছে অর্ধশতাধিক খামারি। একদল ডাকাতচক্রের হাতে জিম্মি তারা। ডাকাতি মামলায় কয়েকজন ডাকাত গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে যায়। এ ধরনের ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খামারিরা।

এ বিষয়ে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পটিয়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে পটিয়া ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসব কথা জানান সংগঠনের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, গত ৪ মাসে পটিয়ায় প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ১২০টি গরু ও মহিষ নিয়ে গেছে ডাকাতের দল। রাতের আঁধারে অস্ত্র ঠেকিয়ে দারোয়ান ও খামারের কেয়ারটেকারকে হাত-পা বেঁধে গাড়িতে করে গরু-মহিষ নিয়ে যায় তারা। ডাকাতদের ভয়ে খামারিরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ডাকাতির ঘটনা নিয়ে থানায় মামলা হলে ২/৩ জন ডাকাত গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক না যেতেই জামিনে বেরিয়ে যায় তারা।

খামারিদের অভিযোগ করে বলেন, গরু ও মহিষ চুরি-ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ কঠোর আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে এমনটা ঘটছে। এতে খামারিরা পশু পালনে নিরৎসাহিত হয়ে পড়ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, পটিয়ায় নির্ধারিত ৪২টি ফার্মসহ প্রায় ৫০টির বেশি ফার্ম রয়েছে। ফার্মগুলোতে বছরে কোটি কোটি টাকার গরু-মহিষ উৎপাদন হয়। ফার্ম মালিকরা চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বর্তমানে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা পশু পালনে সংকটের মুখে পড়েছে। অনেকে ব্যাংক ঋণ ও স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ফার্মে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এরমধ্যে গরু-মহিষ ডাকাতি হওয়ায় খামারিরা সর্বশান্ত হচ্ছেন। ডাকাত দল মহাসড়কের ওপর দিয়ে গরু-মহিষবাহী ট্রাক নিয়ে নিরাপদে চলে যায়। হাইওয়ে পুলিশ এসব ট্রাকগুলোর ব্যাপারে কোনো যাচাই-বাছাই করে না।

খামারিরা বলেন, জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরোল গ্রামের মো. ইউনুছ নামের এক খামারির সাড়ে ৪ লাখ টাকা মূল্যের ৩টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করলে গ্রাম পুলিশ আবু তাহের নামের এক ডাকাতকে আটক করে থানায় দেয়। কিন্তু মামলায় দুর্বল ধারার কারণে ৮ দিন পর ওই ডাকাত জামিন পেয়ে যান। জামিনে বেরিয়েই মামলার বাদি ইউনুছকে মারার জন্য খুঁজতে থাকেন।

দক্ষিণ চট্টগ্রামে ডাকাত দলের গডফাদার আবদুল নবী প্রকাশ নব্ব্যা চোরা বলেন জানান খামারিরা। তারা বলেন, নবীর আস্তানায় ডাকাতি করা গরুগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে গ্রেপ্তার করলে পুরো সিন্ডিকেটের রহস্য বেরিয়ে আসবে।

এছাড়া ডাকাতদের বিরুদ্ধে ৪৫৭/৩৮০ ধারার বদলে ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিলে গরু ডাকাতি অনেকটা বন্ধ হবে বলে আশাবাদ জানান খামারিরা। এ ব্যাপারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পটিয়া ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাসেল, সহসাধারণ সম্পাদক কপিল উদ্দীন, প্রচার সম্পাদক শফিউল আলম, মহিলা সম্পাদিকা ফারহানা ইয়াছমিন, সদস্য হাসিনা আকতার, মো. হারুন, মো. শফিক, আলী আকবর, নাজমুল হক, আবদুল মন্নান।

কেএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!