চকরিয়ার কৃষি কর্মকর্তার বদলির দাবিতে আল্টিমেটাম

চকরিয়ার কৃষি কর্মকর্তার বদলির দাবিতে আল্টিমেটাম 1মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আতিক উল্লাহ’র বিরুদ্ধে তার কার্যালয়ের অধীনস্থ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব বড়–য়াকে শাররীকভাবে লাঞ্চিত এবং নাজেহাল করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে চকরিয়া উপজেলাসহ জেলার কৃষি বিভাগে কর্মরত ১৫৫জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সংগঠন ডিপ্লোমা কৃষিবিদ এসোসিয়শন কক্সবাজার জেলা কমিটি ঘোষনা দিয়েছেন আগামী ১০ মে’র মধ্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহকে চকরিয়া থেকে প্রত্যাহার করা না হলে তাঁরা পরবর্তীতে কর্মবিরতি পালনসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন। ওই কর্মকর্তা বারবার বদলি ঠেকিয়ে গত সাতবছর ধরে একই স্টেশনে কর্মরত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে রাজস্ব খাতের আউশ প্রদর্শনীর আওতায় উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে নগদ টাকা, সার, বীজ ও ড্রাম বিতরণ করা হয়। ওইদিন বিকালে উপজেলাস্থ কৃষি ট্রেনিং সেন্টারে বিতরণ অনুষ্ঠানে উপকারভোগী কৃষকের নামের তালিকার ক্রমিক নম্বর ভুল হওয়ার জেরে উত্তেজিত হয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ তালিকা প্রস্তুতকারী উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব বড়–য়াকে কিলÑঘুষি মারেন। আহত ওই কর্মকর্তাকে ঘটনার পরপর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) সঞ্জিব বড়–য়া বলেন, কৃষকের মাঝে আউশ প্রদশর্নীর উপকরণ বিতরণ করার সময় তালিকায় একটি ক্রমিক নম্বর ভুল হয়। বিষয়টি দেখে কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ ক্ষেপে যান। এসময় তাকে গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করলে তাকে কিল-ঘুষি মারেন। ঘুষিতে তার হাতের আঙ্গুল কেটে গেছে।
এ ঘটনায় আক্রান্ত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) সঞ্জিব বড়–য়া ঘটনার দিনই কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপ-পরিচালক ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছেন।বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত চলছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সংগঠন (ডিপ্লোমা কৃষিবিদ এসোসিয়শন) চকরিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি সাইদুল হক বলেন, অভিযুক্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ একটানা সাতবছর ধরে চকরিয়া উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন একটি স্টেশনে থাকার কারনে অধিনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে প্রায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। এমনকি কাজে একটু ভুল হলে অশালিন ভাষায় গালি দেন অধিনস্থ কর্মচারীদের।
তিনি আরো বলেন, এ ধরণের একটি কাজে সামান্য ভুল হওয়ায় ওই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে অধিনস্থ কর্মচারী সঞ্জিব বড়–য়াকে কিলÑঘুষি মারেন।
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ এসোসিয়শনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বলেন, সিনিয়র কর্মকর্তা হয়ে তুচ্ছ ভুলের কারনে জুনিয়র কর্মকর্তাকে শাররীকভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি আহত উপ-সহকারি কর্মকর্তা সঞ্জিব বড়–য়া ইতোমধ্যে লিখিতভাবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু আহত কর্মকর্তা আমাদের সদস্য, তাই মানবিক বিবেচনায় আমরা সংগঠনের ১৫৫জন সদস্য বৈঠক করে সিদ্বান্ত নিয়েছি অভিযুক্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আগামী ১০ মে’র মধ্যে চকরিয়া উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হলে পরবর্তীতে কর্মবিরতি পালনসহ বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষনা করা হবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আতিক উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আউশ প্রর্দশনী অনুষ্ঠানে উপ-সহকারি কর্মকর্তা সঞ্জিব বড়–য়াকে আমি কোন ধরণের আঘাত করিনি। উপকারভোগী কৃষকের তালিকায় ক্রমিক নম্বর ঘষামাঝা দেখে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ওই উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওইসময় তিনি কোন ধরণের সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে শুধুমাত্র ভর্ৎসনা করেছি।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ.ক.ম শাহরিয়ার বলেন, আহত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট ঘটনার ব্যাপারে দুইপক্ষকে ডেকে বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্তে ঘটনার কিছুটা আলামতও পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, কোন স্টেশনে কর্মকর্তার সাথে অধিনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলাদলি ও মনোম্যালিন্য শুরু হলে সেখানে প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাই বিষয়টি যাতে বেশিদুর না গড়ায় সেইজন্য আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!