চসিক ও গৃহায়নের পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি

গৃহায়ন প্রকৌশলীকে চসিক মেয়রের মারধর!

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলী লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। দুই পক্ষ থেকেই পালন করা হচ্ছে কর্মসূচী। চসিক এবং গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চলমান এসব কর্মসূচীর কারনে বন্ধ রয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চলমান কার্যক্রম। সেই সাথে সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ ফেলে যোগ দিচ্ছে প্রতিবাদ কর্মসূচীতে। এমন পরিস্থিতিতে নগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বাসী।

বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, সকল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যবদ্ধভাবে মানববন্ধন করেছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সড়কের এক পাশ বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা।

ওই কর্মসূচীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি ঘোষনা দেন, চট্টগ্রামের মাটিতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাশের বিচার হওয়া ছাড়া তারা কর্মসূচী চালিয়ে যাবেন। আগামী বৃহষ্পতিবার থেকে ৩ দিন সব কাউন্সিলর অফিস বন্ধ রাখার ঘোষনা দেওয়া হয়। নাগরিক সুবিধার জন্য কাউন্সিলররা শুক্র ও শনিবারও অফিস খোলা রাখেন। এই ঘটনার কোন সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা শুক্র ও শনিবার অফিস বন্ধ রাখবেন।

এদিকে কাজ ফেলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধনে অংশ নেওয়ায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, বনায়ন ও বস্তি উন্নয়ন সহ সকল নাগরিক সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মানবন্ধনে অংশ নেওয়া কর্মচারীরা জানায়, উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তারা কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছেন। এর বেশি তারা কিছু বলতে রাজী হয়নি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বনায়ন ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মইনুল হোসেন আলী চৌধুরী জানান, এই বিভাগে চট্টগ্রাম নগরে ১ শ জন কর্মচারী কাজ করে। সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত কাজ করে তারা। কর্মসূচীতে আসার কারনে নাগরিক সুবিধা ব্যাহত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করে। মেয়রের সাথে গনপুর্ত বিভাগের এক সহকারী প্রকৌশলীর অসৌজন্য আচরনের প্রতিবাদে সবাই কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছে। এই ঘটনাকে চট্টগ্রাম বাসীর জন্য দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও পালন করা হচ্ছে নানা কর্মসূচী। সহকারী প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাশকে মেয়র কর্তৃক শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে কলম বিরতি সহ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় সহ সারাদেশে কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাশ বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে কর্মসূচী পালন করছে। বুধবার ও কলম বিরতির পাশাপাশি মানবন্ধন কর্মসূচী রয়েছে। দেশের আর কোন কর্মকর্তাকে যেন শারিরীক লাঞ্চনার শিকার না হতে হয় এমন নিশ্চয়তা চান তিনি। এই ঘটনার সুরাহা চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেন।

আন্দোলন কর্মসূচীর কারনে উন্নয়ন কাজের কোন ব্যাঘাত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাঘাত হয়তো কিছুটা হচ্ছে, কিন্তু কাজ করতে গিয়ে আমরা লাঞ্চিত হবো এটাতো মেনে নেওয়া যায়না। পরিবার বা সমাজে আমাদেরও অবস্থান আছে।

নগরীর হালিশহরে পোর্ট কানেকটিং সড়কে ড্রেন সংস্কারের জন্য গৃহায়ণের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কথা বলতে ১ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় মেয়রের কাছে যান গনপুর্ত বিভাগের ছয় জনের একটি দল। সেখানে আলাপের একপর্যায়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামান পলাশকে থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়েরও ওই প্রকৌশলীকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এদিকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলীকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিক কার্যালয়ে গনমাধ্যম কর্মীদের এই ঘটনার বাখ্যা দেন তিনি। ওই প্রকৌশলী তার সাথে বেয়াদবি করেছেন বলে দাবী করেন মেয়র।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!