ক্ষমতার দাপটে চট্টগ্রামে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেন খাদ্য কর্মকর্তা

ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করা হলেও সেটি পরিচালনা করেন অন্য এলাকার এক ব্যক্তি। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বরের জায়গায় দেওয়া হয়েছে আরেক ব্যক্তির নম্বর, যার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।

চট্টগ্রামের সেই কর্মকর্তার নাম জ্ঞানপ্রিয় বিদূশী চাকমা। তিনি চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রায় চার বছর ধরে তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে বাগিয়ে নিচ্ছেন। তার বাবার নামে ঠিকাদারির লাইসেন্স করা প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘শিবলী এন্টারপ্রাইজ’ বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বিজ্ঞপ্তির প্রকাশের মাধ্যমে মোট ৪৬৮ জন পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ দেয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য অধিদপ্তর। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের এসব ঠিকাদারের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়।

পরে ২০২০ সালের শেষে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে নতুন করে কোনো পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে তিন মাস পর পর ঠিকাদারদের সময় বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য অধিদপ্তর।

এর পরের বছর করোনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনও সেই করোনার পরিস্থিতির দোহাই দিয়েই ঠিকাদারদের মেয়াদ বাড়িয়ে চলছে কার্যক্রম। ২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত অন্তত ১৬ বার ৪৬৮ জন পরিবহন ঠিকাদারদের মেয়াদ বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য অধিদপ্তর।

আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য অধিদপ্তরের ৪৬৮ জন ঠিকাদারের তালিকায় শিবলী এন্টারপ্রাইজ রয়েছে ১৬২ নম্বরে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী হিসেবে রয়েছেন জ্ঞানপ্রিয়ের বাবা প্রমোদ বিকাশ চাকমা। তবে বর্তমানে তার শিবলী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন মো. ইছা নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়।

এদিকে পরিবহন ঠিকাদার প্রমোদ বিকাশ চাকমার ঠিকানা দেখানো হয়েছে খাগড়াছড়ি দীঘিনালা থানাপাড়া এলাকায়। আর মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে খাগড়াছড়ির রতন নামের এক ব্যক্তির।

এই বিষয়ে রতনের কাছে জানতে চাইলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না, কে আমার নম্বরটি দিয়েছে, সেটিও জানি না।’

আপনি প্রমোদ বিকাশ চাকমাকে চেনেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রমোদ বিকাশ চাকমা খাদ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূশী চাকমার বাবা। তাদের চিনি, তাদের বাড়ি খাগড়াছড়ি। তারা দু’জন আমার পরিচিত, ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের। বর্তমানে শিবলী এন্টারপ্রাইজ ইছা নামের একজন পরিচালনা করছেন। ইছার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জ্ঞানপ্রিয় বিদূশী চাকমাকে একাধিকবার মুঠোফোন কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার বক্তব্যের জন্য অনুরোধ করে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করা হয়। তিনি এসএমএস দেখেও কোনো উত্তর দেননি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারি কোনো কর্মচারী ব্যবসা করতে পারেন না। আমার বিভাগের আওতায় কেউ থাকলে তার তথ্য আমাকে দেন, আমি ব্যবস্থা নেব।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!