কর্ণফুলী গ্যাসে ভুয়া ভাউচারে কোটি টাকা হাওয়া, পিকনিকের টাকাও ট্রাস্টি বোর্ডের পকেটে

জাতীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও কল্যাণ তহবিলে মুনাফার ২০ ভাগ না দিয়ে এফডিআর করার পর সেই টাকা ভুয়া ভাউচারে মেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে। গত পাঁচ বছর ধরেই মুনাফার ভাগ দেওয়া হয়নি। এসব মুনাফার এফডিআরের মধ্যে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। এর মধ্যে চলতি বছরেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের নামে ভুয়া ভাউচার হাতিয়ে নেওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা।

এছাড়া পিকনিকের নামেও কর্মরত ব্যক্তিদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে ট্রাস্টি বোর্ড। সেই টাকার অর্ধেক পিকনিকে খরচ দেখিয়ে বাকিটা পকেটে ভরেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। এভাবে তারা বিভিন্ন উৎস থেকে বিভিন্ন সময় টাকা সংগ্রহ করেছে আর নিজেদের পকেটে ভরেছে। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে তারা অন্তত ১০ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে জাতীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও কল্যাণ তহবিল থেকে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে বের হয়ে এসেছে এসব তথ্য। গত ২১ মার্চ বিকালে চট্টগ্রামের ষোলশহর কেজিডিসিএল কার্যালয়ে যায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। ওই সময় কেজিডিসিএলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মহাব্যবস্থাপক মোজাহার আলীর দপ্তরে অভিযান চালায় তারা। অভিযানে কোম্পানির বার্ষিক আয়ের মুনাফার শতকরা ২০ ভাগ টাকা নির্দিষ্ট জায়গা জমা না করার প্রমাণ মেলে।

জানা গেছে, নিয়ম অনুসারে মুনাফার ১০ ভাগ টাকা কল্যাণ তহবিল এবং বাকি ১০ ভাগ টাকা জাতীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনে জমা দেওয়া কথা। কিন্তু দুই জায়গাতেই ‘দুই নম্বরি’ করেছে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে মুনাফার ২০ ভাগের টাকা দেয়নি ট্রাস্টি বোর্ড। এসব টাকা থেকে ভুয়া বিল বানিয়ে কয়েক বছর ধরে অন্তত ১০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে তারা।

এর মধ্যে মুনাফার টাকা থেকে চলতি বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক জন্মবার্ষিকীতেই কোনো ভাউচার ছাড়াই ১৫ লাখ টাকা লোপাট করার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক।

অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষকে হিসাব দেখাতে ভুয়া-ভাউচার আগে থেকেই ছাপিয়ে রাখে ট্রাস্টি বোর্ড। এসব ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে কোম্পানির বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠানের নামে ব্যয় দেখিয়ে অর্থ লোপাট করেছে ট্রাস্টি বোর্ড।

যেভাবে হাওয়া ১৫ লাখ
চলতি বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা অর্থ তুলে নেয় ট্রাস্টি বোর্ড। এসব অর্থ বণ্টনের দায়িত্ব পান কেজিডিসিএলের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অনুপম দত্ত। তিনি ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ তুলে দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাকলায়েনের মা চিকিৎসায়। বাকি টাকা অনুপম দত্তসহ ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়।

ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য যারা
কেজিডিসিএলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা হলেন—মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. মোজাহার আলী, মোহাম্মদ খায়রুল হাসান (হিসাব ডিভিশন), কেজিডিসিএলের কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি জাবের আল খতিব ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ।

ট্রাস্টি বোর্ড চার সদস্য ছাড়াও অর্থ লোপাটের ভাগ পান সেখানকার আরও দুই কর্মকর্তা। তারা হলেন—কেজিডিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় দক্ষিণ-১) গৌতম কুণ্ডু ও অনুপম দত্ত। গৌতম কুণ্ডু গত কয়েক বছর ধরে কোম্পানির বিভিন্ন প্রোগ্রামের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!