করোনাযুদ্ধে জয়ী গরীবের ডাক্তার পারভেজ আবারও মাঠে, হারিয়েছেন মাকেও

চেম্বারে রোগী দেখতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। মাঝে ২১ দিন ছিলেন আইসোলেশনে। জয় করেছেন করোনাকেও। সুস্থ হতে যে ক’দিন তিনি ছিলেন হাসপাতালে তার মধ্যেই হারালেন ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে।

করোনার কঠিন এ সময় উতরে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আবার নেমেছেন অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায়। শ্বাসকষ্ট আর করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের যেখানে তাড়াচ্ছে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো, সেখানে তিনি এই রোগীদেরই চিকিৎসা করার ঘোষণা দিলেন। শুধু তাই নয়, রোগীদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন ফ্রী অক্সিজেনেরও।

বলছিলাম হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের ডা. এম ওয়াই এফ পারভেজের কথা। বিনা খরচে গরীবদের চিকিৎসা করেন বলে গরীবের ডাক্তার বলে হাটহাজারীজুড়ে খ্যাতি রয়েছে তার।

হাটহাজারীর আমানবাজারের আরেফিন মেডিকেল হলে রোগী দেখতেন তিনি। গত ৩১ মে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের ফলাফলে দেখা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এরপর থেকে ২১ দিন আইসোলেশনে থাকেন তিনি। গত ২০ জুন তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল করোনা নেগেটিভ আসে। এর মধ্যে ৯ দিন ছিলেন হাসপাতালে। এর মধ্যে হারিয়েছেন ক্যান্সার আক্রান্ত গর্ভধারিণী মাকেও। পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নিজের স্ত্রীও। বর্তমানে দুইজনই সুস্থ আছেন। করোনাজয় করেই তিনি শ্বাসকষ্ট, করোনা উপসর্গসহ সব ধরনের রোগী নিয়মিত দেখার ঘোষণা দিয়েছেন।

ডা. পারভেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদের দুই দিন আগে থেকে চেম্বার বন্ধ করেছি। ঈদের নামাজ পরে যে ঘরে প্রবেশ করলাম আর বের হয়নি।। এরমধ্যে ভালই ছিলাম। হঠাৎ ৩১ মে বিকালে প্রচন্ড ব্যথাসহ জ্বর আসল। খুবই কষ্ট হচ্ছিল। ১ জুন সন্ধ্যা থেকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলাম, বাসায় অক্সিজেন ছিল। দিলে একটু ভালো লাগতো। স্যাচুরেশন দেখলাম ৯১ শতাংশ। এরপর যাবতীয় মেডিসিন শুরু করার পাশাপাশি একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলাম।’

তিনি বললেন, ‘এরমধ্যে আমার মায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। যিনি ১ বছর ধরেই ক্যান্সার আক্রান্ত। হাসপাতাল থেকে ৬ জুন পিপিই পড়ের বাসায় আসলাম। মায়ের কাছে গিয়ে দেখি তিনি বিড়বিড় করতেছেন। ঠোঁট দুইটি কাঁপছিল মায়ের। পাশে বসলাম। বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে মা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলেন। এর মধ্যে আমার স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হলেন। ৯ দিন হাসপাতালে অবস্থান করার পর ৯ জুন হাসপাতাল থেকে বাসায় আসলাম। ২০ জুন আমার আইসোলেশনের ২১ দিন শেষ হল। সকলের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ আমি ও আমার স্ত্রী সুস্থ হলাম। আল্লাহ আমাকে করোনা থেকে মুক্ত করেছেন। করোনার কষ্ট আমি বুঝি। খুবই কাছ থেকে মৃত্যুকে উপলব্ধি করলাম। এই সময় মানসিক সাপোর্টটা খুব বেশি জরুরী।’

গরীবের এই ডাক্তার আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কারও অক্সিজেন লাগলে আমি দিব। শ্বাসকষ্ট বা করোনা সাসপেক্টেড যে কোন রোগী প্রয়োজনে আমার কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে পারবে।করোনায় আক্রান্ত যে কেউ যেকোন সময়, যেকোন প্রয়োজনে আমাকে পাশে পাবে।’

এমআইটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!