কক্সবাজার সদর থানায় দালাল চক্রের চাঁদাবাজি ও আটক বাণিজ্য

কক্সবাজার সদর মডেল থানার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। প্রতিনিয়ত দালালের খপ্পরে পড়ে আর্থিক ও শারীরিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বিচারপ্রার্থী লোকজন। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় চলছে নানা অপকর্মসহ চাঁদাবাজি ও আটক বাণিজ্য। অভিযোগ ওঠেছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, নানা বিরোধপূর্ণ জমিসংক্রান্ত বিষয়ে আটক ও মাদক কিংবা ইয়াবা ব্যবসায়ীর অপবাদ দিয়ে গ্রেপ্তার করে তা মোটা অংকে ছাড়ানোসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এই দালাল চক্র।

সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সদর মডেল থানার কার্যক্রম বর্তমানে দালালনির্ভর হয়ে পড়েছে। দালাল কিংবা সোর্স পরিচয়ে অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের হয়ে কাজ করছে তারা। পুলিশও তাদের কথামতো ধরছে আর মোটা অংক নিয়ে মামলা কিংবা ৩৪ ধারায় অথবা ছাড়ছে। অতীতের কোন অপরাধ কিংবা নিরাপরাধ মানুষকে যেমন গালি বা অপকর্মকারি হিসেবে জামায়াত-শিবির বানানা হতো ঠিক তেমনি বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে ওজুহাত। মূলত দালালরা যেভাবে পরিচালনা করছে ঠিক সেভাবেই পরিচালিত হচ্ছে সদর মডেল থানার গুটি কয়েক পুলিশ অফিসার। যাদের মধ্যে মানবতা কিংবা মানবিকতা বলতেই কিছুই নেই।

সূত্রে আরও জানা যায়, চট্রগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার মো. জাহাঙ্গীর নামে সদর মডেল থানায় এমন দালালও রয়েছে যার মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা। শুধুমাত্র সে এক অফিসারের হয়ে কাজ করে। এছাড়াও ওই দালাল উক্ত অফিসার দিয়ে যেসমস্ত লোকজন ধরায় এসমস্ত লোকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া কিংবা ছেড়ে দেওয়ার সময় যে টাকা আদায় করা হয় ঐ টাকা থেকেও ভাগ পায় বেতনভুক্ত এই দালাল। এছাড়া বর্তমানে প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধি পরিচয়ে রয়েছে প্রথম শ্রেণির দুই দালাল। তারা হল শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার জৈনক এসআই আকতার কামাল ও পিএমখালীর জৈনক মাদুল করিম। এ দুই দালাল গুটিকয়েক অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে সমানতালে ধান্ধাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার ক্ষমতা এতই বেশি তার নিজ এলাকা পিএমখালী ইউনিয়ন থেকে কোন আসামি কিংবা সন্ত্রাসিকে ধরতে হলে তার অনুমতি নিতে হয়। আবার কোনো আসামি ধরে থানা হাজতে নিয়ে আসা হলে ভালো-খারাপের সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য পুলিশ কর্তা তাকে থানায় ডেকে নিয়ে যান। যে কারণে তার দালালির অবস্থানও অন্যদের চেয়ে অনেক শক্ত।

অভিযোগ ওঠেছে করিমের বড়ভাই আব্বাসও এক সময় সমাজের এক সুণামধন্য ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে থানায় দালালি করতো। পরে ওই ব্যক্তি বিষয়টি জানার পর আব্বাসকে উত্তম-মধ্যম দিলে সে থানার দালালি ছাড়তে বাধ্য হয়। বড়ভাই থানা ছাড়ার সুবাধে এই পদে বর্তমানে দেদারছে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে ছোটভাই করিম।
অভিযোগ ওঠেছে হরেকরকম ওজুহাতে সমাজের বিত্তবান ও নানা অপকর্মকারিদের থানায় ধরে এনে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছে দালাল মাদুল করিম। বলতে গেলে তার ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে সদর থানাধীন অহরহ বিচারপ্রার্থী ও নানা পেশার মানুষ।

এদিকে করিমের ন্যায় কুতুবদিয়া পাড়ার আকতার কালামের ক্ষমতা বেশি না হলেও সে কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অন্তত প্রতিদিন ১০টির অধিক নানা মামলার তদবির চালিয়ে পকেট ভারী করে বাড়ি ফিরে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উল্লেখিত দালাল ছাড়াও আরও যারা রয়েছে তারা হল, সাইদুল প্রকাশ ছৈয়দ, বাবু, বাইট্টা রমজান, সোহাগ, রাশেদ, সরওয়ার, উপজেলার হুমায়ুন, বাহারছড়ার রাসেল ও বাবু। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারি ও নানা পেশার দালাল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, ‘বর্তমানে থানার পরিবেশ খুবই ভয়াবহ। অফিসাররা যে কোন বিষয়ে সিন্ধান্ত দেওয়ার পূর্বেই দালালরা সিন্ধান্ত দিয়ে বসে এবং দালালের সিন্ধান্তই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়। মূলত অপকর্মের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণে থানার পরিবেশ চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে দাবী পুলিশ কর্মকর্তাদের।

এদিকে থানায় দালালের বেপরোয়া উৎপাত ও তাদের নানা অপকর্মের ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার (পিপিএম) চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে অনেক দালাল ছিল। বর্তমানে অনেকটা কমেছে। মাদুল করিমকেও বারণ করা হয়েছে যেন থানার চার পাশে না আসে। তার পরেও কিছু দালাল থানারে আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!