ওজনে কারচুপি আর প্রতারণায় মেতেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

কী মাংসের দোকান, কী চালের আড়ৎ কিংবা ভোগ্যপণ্যের দোকান—সবখানেই ওজনে কম আর প্রতারণার আশ্রয়। রমজান উপলক্ষে ভোক্তাদের ঠকানোই যেন ব্যবসায়ীদের একমাত্র টার্গেট। রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে উঠে এসেছে এসব চিত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) নগরীর ষোলশহরের কর্ণফুলী কমপ্লেক্স এবং বহদ্দারহাটের হক মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উঠে আসে এমন চিত্র। অভিযান চলাকালীন প্রতারণার আশ্রয় নেয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের কৌশল দেখে হতভম্ব হয়ে যান খোদ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।

বহদ্দারহাট মাংসের বাজারে অভিযান শেষে বের হয়ে যাচ্ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফোরকান এলাহী অনুপম। এমন সময় আলাউদ্দিন নামের এক ক্রেতা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করেন মাংস বিক্রেতা তার কাছে থেকে মূল্যতালিকা থেকে ৫০ টাকা বেশি নিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে দেখেন আবু সুফিয়ান নামের ওই মাংস বিক্রেতার দোকানের মুল্য তালিকায় এক কেজি খাসির কলিজার বিক্রয়মূল্য লেখা আছে ৩৫০ টাকা। কিন্তু দোকানদার ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করেন ৪০০ টাকা। ৫০ টাকা বাড়তি আদায়ে তাকে মাসুল গুণতে হল ৫ হাজার টাকা। এ সময় ফোরকান এলাহী মাংসবিক্রেতা আবু সুফিয়ানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ঈমান ঠিক রেখে ব্যবসা করার নির্দেশ দেন।

মাংসের বাজারে দেখা যায়, বিক্রি হওয়া গরুর মাংসগুলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত কসাইখানায় জবাই হয়নি। মাংস বিক্রেতারা জানায়, সোমবার (২৯ এপ্রিল) সিটি কর্পোরেশনের কসাইখানায় গরু জবাই হয় না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট স্থানে গরু জবাই না হলে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির সম্ভাবনা থাকে। গরু জবাইয়ের সঠিক তথ্য দিতে না পারায় মাংস বিক্রেতা আব্দুল করিমকে এক হাজার ৫০০ টাকা, অধিক দামে মাংস বিক্রি করার দায়ে জিয়াউর রহমানকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

বহদ্দারহাটের হক মার্কেটের চালের আড়তদার এবং ভোগ্যপণ্যের দোকানদার এসএম ফারুক। তার চালের গুদাম মেসার্স পূবালী খাদ্যভান্ডারে অভিযান চালিয়ে ৫০ কেজি ওজনের চালের বস্তা পরিমাপ করে ৭৫০ গ্রাম কম পাওয়া যায়। এই অভিযোগে ওই গুদামের মালিককে জরিমানা করা হয় ২০ হাজার টাকা। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট ওজনে কম দেওয়ার জন্য দোকানমালিক ফারুককে সতর্ক করে দেন।

বহদ্দারহাটের খুচরা দোকান মেসার্স হাটহাজারী স্টোরকে মূল্যতালিকা না টাঙানোয় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানের সময় ওই বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা মাসুদ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে বার বার প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এই সময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সীমা লংঘন না করার নির্দেশ দেন ওই ব্যবসায়ী নেতাকে।

এছাড়া ষোলশহরের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে পণ্যের মূল্যতালিকা না থাকার অভিযোগে মুঈনিয়া স্টোরকে এক হাজার টাকা, ৩১০ টাকা দিয়ে কিনে ৩৫০ টাকার মূল্যে বাটা মাছ বিক্রি ও মূল্যতালিকা না টাঙানোয় মাছবিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন এবং আইয়ুবকে ৫০০ টাকা করে একহাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানের শুরুতে কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী রমজান এলেই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। পাইকারি বাজার কিংবা খুচরা বাজারে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা তা আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করবো। ভোগ্যপণ্যের মার্কেট থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমলেও অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানান দেলোয়ার হোসেন।

কর্ণফুলী কমপ্লেক্স এবং বহদ্দারহাটে বাজার মনিটরিংয়ের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফোরকান এলাহী অনুপম বলেন, আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে যাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে জরিমানা এবং শাস্তির মাত্রা বাড়বে। ব্যবসায়ীদের একাধিকবার পণ্যের মূল্যতালিকা লাগানোর জন্য বলা হলেও তারা এখনো তা সংরক্ষণ করেননি। পর্যায়ক্রমে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান, বিএসটিআই এর পরিদর্শক মুকুল মৃধা, কৃষি বিপণন বিভাগের বাজার ব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন, ক্যাব প্রতিনিধি সেলিম সাজ্জাদ ও চট্টগ্রাম চেম্বার প্রতিনিধি মোকাম্মেল হোসেনসহ প্রতিনিধি নেতৃবৃন্দ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!