এ বর্বরতার আপোষ হয়!

১৪ লাখ টাকা পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাব পলির পরিবারকে

চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরে স্কুল ছাত্রী রেবেকা সুলতানা পলির (১৩) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বাড়িওয়ালা আবুল কাশেম খানকে মামলা থেকে বাঁচাতে ১৪ লাখ টাকার অফার দেওয়া হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে! এমনই অভিযোগ করেছেন মামলার বাদি ও নিহত স্কুল ছাত্রীর পলির বড় ভাই মোহাম্মদ রাসেল।

শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ‘অ্যান্দ্রে রাসেল’ নামে নিজের ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছেও একই অভিযোগ করেছেন রাসেল। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন থানায় আমার বোনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনার জন্য আমি অ্যাম্বুলেন্স আনতে যাই। তখন আমার মাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানার এস আই আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, কী দরকার ‘মামলা-টামলা’ করার। শুধু শুধু কষ্ট করে হয়রানি না হয়ে আপোষ করে ফেলেন। আপোষ করলে কমপক্ষে ১৪ লাখা টাকা পাবেন। আমরা ব্যবস্থা করে দেব। বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে মিলে যান ভেজালে না গিয়ে।

তখন এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করে পলির মা মামলা করার সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন বলেও জানান তিনি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে মামলা রেকর্ড করলেও সেখানেও আটক বাড়িওয়ালা আবুল কাশেম খান ওরফে একে খানকে এফআইআরে (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) আসামি করেনি পুলিশ। পরে তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে শনিবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী।

নিহত পলির বড় ভাই মোহাম্মদ রাসেল তার ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করে লিখেন, ‘০২-১০-২০১৯ আমার বোন রেবেকা সুলতানা পলি হত্যা হওয়ার পর। পুলিশ প্রশাসন ৮.৩০ এর দিকে আসে এবং লাশ নামিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। তখন আমার বোনের পিঠে আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামড়ের দাগ, গলায় নখের দাগ, মুখে হাতের ছাপ, হাতের কব্জি ভাঙ্গা এবং তালুতে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও সুরতহালে তা উল্লেখ করা হয়নি।

তবে আসামি আবুল কাশেম খানকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় যাওয়ার পর আসামিপক্ষ পুলিশ প্রশাসনকে টাকা দিতে আমরা স্বচক্ষে দেখি। তখন এই ঘটনাকে সামনে এগিয়ে না নেওয়ার জন্য পুলিশ পক্ষ থেকে আমাদেরকে ১৪ লক্ষ টাকার প্রস্তাব দেওয়া হলে। আমরা তা নাকচ করি।

তিনি আরো লেখেন,পরবর্তীতে লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আমরা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে প্রশাসন মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। আমরা অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে অভিযোগ নিতেও অস্বীকৃতি জানায়। তখন আমরা মিডিয়ার শরণাপন্ন হলে তারপর তারা মামলা নেয়। তবে আমরা মামলায় আবুল কাশেম খানকে আসামি করতে চাইলে পুলিশ তা না করে আসামি অজ্ঞাত রেখে মামলা করে।আসামির অর্থবিত্ত ও প্রভাব প্রতিপত্তি থাকায় এবং পুলিশ প্রশাসনের এমন ভূমিকায় আমরা এখন ন্যায়বিচার নিয়ে শংকায় আছি।

তবে এ প্রসঙ্গে বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি। মামলাও হয়েছে। তারা যাকে সন্দেহ করেছে তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডেও এনেছি। এখন তারা তো একেক সময় একেক কথা বলছে। আপোষের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা বানোয়াট। এখন সাংবাদিকরা বা যে কেউ যদি কিছু লিখে আমাদের করার কি আছে।

এর আগে বুধবার (২ অক্টোবর) রাতে নগরীর বন্দর থানার দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরে একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে রেবেকা সুলতানা পলি (১৩) নামের এক স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ। বুড়ি পুকুর পাড় এলাকার খান টাওয়ারের নিচতলায় স্বামী পরিত্যক্তা মা ও কলেজ পড়ুয়া ভাইকে নিয়ে থাকতো স্কুল ছাত্রী পলি। পলি নগরীর হালিশহর আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের (সিটি কর্পোরেশনের স্কুলে) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তারা খাগড়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা। তার মা বন্দর এলাকায় সিইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত। নিহতের বাবা অন্য একটি বিয়ে করে মালয়েশিয়া পাড়ি দেন। বর্তমানে নিহত পলির মা উপার্জন করে সংসার চালান। পলির বড় ভাই রাসেল অনার্স শেষ করে বিসিএস কোচিং করছেন।

এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়িতে রেবেকা সুলতানা পলির দাফন সম্পন্ন করা হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া স্কুল ছাত্রী পলিকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তারা বাড়িওয়ালা আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিচার দাবি করেন।
এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!