আগ্রাবাদের শতবর্ষী পুকুর ভরাটের অভিযোগ গেল পরিবেশে

এডিস মশার উপদ্রব কমাতে ভরাট করছি, সাফাই অভিযুক্তের

চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় একটি শতবর্ষী পুকুর ভরাট করার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। পুকুরটিকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নালিশ জানানো হলেও রাতের আঁধারে চলছে পুকুর ভরাটের মহাযজ্ঞ। এই পুরো কাজটির পেছনে স্থানীয় তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া পুকুরটি থেকে ডেঙ্গু মশার জন্ম হয়, তাই ভরাট করা হচ্ছে বলেও জানান এক অভিযুক্ত।

গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে পুকুরটিকে বাঁচাতে লিখিত অভিযোগ জানান স্থানীয় মো. ইব্রাহিম হোসেন বাবুল ও মো. ফয়জুল্লাহ।

এতে একই এলাকার মোহাম্মদ আলমগীর, এহসানুল হক রাকিব ও মো. জাবেদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগটি করা হয়।

অভিযোগ করার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম পুকুরটি দেখতে আসেন। কিন্তু এরপরও রাতের আঁধারে অল্প অল্প করে পুকুরটি ভরাট করছে বলে অভিযোগ জানান অভিযোগকারীরা।

পুকুর ভরাটের অভিযোগটি স্বীকার করে নেন অভিযুক্ত তিনজনের একজন মো. জাবেদ। পুকুর ভরাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখানে ডেঙ্গু মশা জন্মে, আমার বাচ্চা দুটোও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাই আমরা ওটাকে ভরাট করার সিদ্ধান্ত নিই।’ তবে পুকুরটিকে একটি পরিত্যক্ত জলাশয় বলেন জাবেদ।

তিনি আরও বলেন, ‘এই পুকুরের এক শতক জায়গার মালিক অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলমগীর এবং আরও এক শতকের মালিক আমাদের একটি আধ্যাত্মিক সংগঠনের পীর। তাই আমরা যৌথভাবে মিলে পুকুরটা ভরাট করা শুরু করি। কিন্তু বাকিদের অভিযোগের পর আর ভরাট করিনি।’

অভিযুক্ত জাবেদ পুকুর ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো ধরনের পুকুর ভরাট করা হয়নি বলে দাবি করেন আরেক অভিযুক্ত এহসানুল হক রাকিব। তিনি বলেন, ‘এক সময় এটি পুকুর থাকলেও বর্তমানে এটি আর পুকুর নেই। অনেক আগে থেকেই মানুষ পুকুরটির অনেক অংশ ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। আমাদের কেনা জায়গায় পুকুরটি ভরাট করতে গেলে অভিযোগকারীরা জায়গাটি ওদের কাছে বিক্রি করতে বলে, আমরা না করায় আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।’

জাবেদ পুকুরটিকে নষ্ট জলাশয় বললেও বিএস দলিলে ২৭১৫ নম্বর খতিয়ান ও ১১৩০৫ দাগ নম্বরে জায়গাটিকে পুকুর হিসেবেই উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও বিবাদি পক্ষ অভিযোগের পর আর মাটি ভরাট না করার কথা জানালেও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে থাকা একাধিক ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, রাতের আঁধারে ট্রাকে করে মাটি এনে ভরাট করা হচ্ছে পুকুরটি। ইতোমধ্যে পুকুরটির পাড়ের দিকে অধিকাংশ জায়গায় ভরাট করা হয়েছে।

বাংলাদেশের জলাধার সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পুকুর ভরাট করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এদিকে নিউজ করলে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন অভিযুক্ত আলমগীর। এছাড়া তিনি একাধিক জনকে দিয়ে এই বিষয়ে নিউজ না করতে তদবীর জানান। এর মধ্যে নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয় দেওয়া রাসেল নামের এক যুবক ফোন করে নিউজ কেন করা হচ্ছে কৈফিয়ত চান। কিছুক্ষণ পর আবারও ফোন করে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!