হালিশহর পিসি রোডের কাজ ফেলে পালানো দুই ঠিকাদারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দুদকের

চট্টগ্রামের নগরীর হালিশহরের পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোডের দুটি দরপত্রের কাজ অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়া ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১০ মে) বিকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঢাকার উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বাদি হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলা তদন্তের জন্য রেকর্ড দেখানো হয়েছে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর দফতরে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।

মামলা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন হালিশহর পিসি রোডের নিমতলা থেকে অলঙ্কার পর্যন্ত রাস্তা ও ড্রেন সংস্কারের কাজ দরপত্রের মাধ্যমে পান জাকির হোসেন নামের এক ঠিকাদার। পরে প্রকল্প নিজে বাস্তবায়ন না করে অন্য এক ঠিকাদারকে সেই কাজ হস্তান্তর করেন তিনি। সেই দ্বিতীয়পক্ষও কাজটি অসস্পূর্ণ রেখে চলে যান। এতে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হলে সরকার ৪ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ৪২৯ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

এরপর দ্বিতীয় পক্ষ ঠিকাদার মো. আলম নিজেকে জাকির হোসেনের সঙ্গে অংশীদারি ব্যবসা করেন বলে জানান। সেইসঙ্গে তিনি রানা বিল্ডার্স অ্যান্ড সালেহ আহমেদ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও দাবি করেন। সেই হিসেবে তিনি ব্যাংক থেকে দরপত্র দেখিয়ে চারটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সেই ঋণ সুদসহ দাঁড়ায় ২০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এই টাকা পরিশোধ না করেই কাজ ফেলে চলে যান মো. আলম।

এছাড়া একই জায়গায় নিমতলা থেকে অলঙ্কার পর্যন্ত রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার দ্বিতীয় দরপত্রের কাজও পান জাকির হোসেন। একই কায়দায় এই কাজটিও তিনি মো. আলমকে দিয়ে দেন। আলম এই কাজটি অসম্পূর্ণ রেখে চলে যান। এতে সরকার ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেই দরপত্র দিয়ে আরও চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ২০ কোটি ঋণ নেন আলম। যার সুদ দাঁড়ায় ৩৫ লাখ টাকা। ঋণের সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজও ফেলে চলে যান আলম।

দুদকের অনুসন্ধান শেষে ঠিকাদার, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দুটি করা হয়।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন কুমিল্লার ঝাউতলার জোবেদা ম্যানসনের দুধ মিয়ার ছেলে মো. জাকির হোসেন, ঢাকার পশ্চিম পান্থপথ এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে ও মেসার্স রানা বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলম, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার সাবেক এফভিপি অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা মো. সারোয়ার আলম, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার সাবেক অ্যাসিট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার মো. আনিসুজ্জামান (৫৪), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার সাবেক এভিপি অ্যান্ড ক্রেডিট ইনচার্জ ছাইফুল আলম মজুমদার (৩৯), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার সাবেক ইও অ্যান্ড রিলেশনশিপ কর্মকর্তা মকামে মাহমুদুল ইসলাম আরেফিন (৩২) এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার সাবেক ইও অ্যান্ড রিলেশনশিপ অফিসার দেবু বোস (৩৫)। এদের প্রত্যেককে দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। তবে এরমধ্যে ফেনী জেলার ফেনীর সদর থানার ডাক্তার পাড়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে ছালেহ আহম্মদকে (৫২) একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!