কোথায় পাওয়ার হিটের বদলে পাওয়ার হিট দেখার আশা। উল্টো ইংল্যান্ডের পাওয়ারে খেই হারিয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয় নাস্তা-নাবুদ। যার শুরুটা হয়েছিল ‘স্বদেশী’ জোফরা আর্চারের বোলিং তোপ দিয়ে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কফিনে পেরেক মারার কাজটি অনায়াসে করেন প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নামা জো রুট।
কাজ আগেই সহজ করে দিয়েছিলেন বোলাররা। বাকিটা ব্যাটসম্যানরা যেন আরও ভালোভাবে করলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সহজ জয় তুলে নিল ইংল্যান্ড, বলতে গেলে ব্যাট হাতে প্রায় একা হাতেই দলকে জয়ের রাস্তা দেখালেন জো রুট। তবে ওপেনার জেসন রয় ও অধিনায়ক ইয়ন মরগানের ইনজুরি শঙ্কায় সেই সহজ জয়ও নীরস হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের কাছে। এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে উঠে গেছে স্বাগতিকরা।
জেতা শুধু নয়, যাকে বলে দুরমুশ করে জেতা! ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়ে আরও দুই পয়েন্ট ঘরে তুলল ইংল্যান্ড। মাত্র ২১২ রানে ক্যারিবীয়রা অলআউট করার পর হেলায়ফেলায় রানটা তুলে নিয় মরগানের দল। তাও মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে এবং প্রায় ১৭ ওভার বাকী থাকতে।
ইনজুরির কারণে প্রথম ২৮ মিনিট ব্যাটিংয়ে নামতে পারবেন না অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান, পাঁচ উইকেট পড়ার আগে আসতে পারবেন না ওপেনার জেসন রয়ও। অগত্যা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ইনিংসের সূচনা করলেন তিন নম্বরের ব্যাটসম্যান জো রুট।
ছোট লক্ষ্যের প্রতি দুর্দান্ত শুরু করে যখন সাজঘরে ফিরলেন বেয়ারস্টো, তখন যেনো মজা করার নেশা চেপে বসলো ইংলিশ টিম ম্যানেজম্যান্টের ওপর। জস বাটলার, বেন স্টোকসদের মতো স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা ডাগআউটে বসে থাকলেও, তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসকে। যেনো ক্যারিবীয় বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করা!
টিম ম্যানেজম্যান্টের এমন সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ দিতে কোনো কমতি অবশ্য রাখেননি ওকস। জো রুটের সেঞ্চুরির সঙ্গে ক্রিস ওকস খেলেছেন ৪০ রানের ইনিংস। এ যুগলের ১০৪ রানের জুটিতে ৮ উইকেটের বড়সড় জয়ই পেয়েছে ইংলিশরা।
সাউদাম্পটনের রোজ বোলে আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় মাত্র ২১২ রানে। এ সংগ্রহ পেরিয়ে যেতে ইংল্যান্ড হারায় মাত্র ২ উইকেট, তখনও বাকি ছিলো ১০১ বল। এ জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে তিনে নামিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে স্বাগতিকরা।
রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ১৪.৪ ওভারে ৯৫ রান যোগ করেন বেয়ারস্টো ও রুট। ব্যক্তিগত ৪৫ রানের মাথায় বেয়ারস্টো ফিরে গেলেও ওকসের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রানের জুটি গড়েন রুট।
নিজের ব্যক্তিগত ফিফটির দিকেই এগুচ্ছিলেন ওকস। কিন্তু দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় পুল করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন তিনি। শেষের ১৪ রানের জন্য উইকেটে আসেন বেন স্টোকস। ওকস ফিরে গেলেও সেঞ্চুরি তুলে নেন রুট। ৯৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর ৯৪ বলে ঠিক ১০০ রানেই অপরাজিত থাকেন রুট। ১১টি চার মারলেও কোনো ছক্কা মারেননি ইংলিশদের টেস্ট অধিনায়ক। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারা ম্যাচেও তিন অঙ্ক স্পর্শ করেছিলেন রুট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৪.৪ ওভারে ২১২/১০ (গেইল ৩৬, লুইস ২, হোপ ১১, পুরান ৬৩, হেটমায়ার ৩৯, হোল্ডার ৯, রাসেল ২১, ব্র্যাথওয়েট ১৪, কটরেল ০, টমাস ০*, গ্যাব্রিয়েল ০; ওকস ১/১৬, আর্চার ৩/৩০, প্লানকেট ১/৩০, উড ৩/১৮, রুট ২/২৭)
ইংল্যান্ড: ৩৩.১ ওভারে ২১৩/২ (বেয়ারস্টো ৪৫, রুট ১০০*, ওকস ৪০, স্টোকস ১০*; গ্যাব্রিয়েল ২/৪৯)
ফল: ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: জো রুট
এর আগে সাউদাম্পটনে ইনিংসের ৩২ বল বাকি থাকতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ২১২ রানে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ক্যারিবীয়রা। মাত্র ২ রান করে ক্রিস ওকসের বলে বোল্ড হন এভিন লুইস। ক্রিস গেইল আর শাই হোপ সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ৫০ রান।
সেট হওয়ার পর নিজের আসল চেহারাটা গেইল প্রকাশ করতে যাবেন, ঠিক এমন সময়েই লিয়াম প্লাঙ্কেট সাজঘরে পাঠান তাকে। ৪১ বলে ক্যারিবীয় ওপেনার করেন ৩৬ রান। পরের ওভারেই শাই হোপকেও তুলে নেয় ইংল্যান্ড। ৩০ বলে মাত্র ১১ রান করে মার্ক উডের বলে এলবিডব্লিউ হন এই ব্যাটসম্যান।
৫৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ৮৯ রানের জুটি গড়েন সিমরন হেটমায়ার আর নিকোলাস পুরান। এই উইকেটটা থিতুই হয়ে গিয়েছিল। এমন মুহূর্তে চমক দেখান জো রুট। পার্টটাইমার হয়ে জুটিটা তো ভাঙেনই, টানা দুই ওভারে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিবীয়দের আবারও বিপদে ফেলে দেন এই অফস্পিনার।
রুটের নেয়া দুটি উইকেটই ছিল ফিরতি ক্যাচ। ৩৯ রান করে হেটমায়ার যেভাবে আউট হন ঠিক সেভাবেই রুটকে ফিরতি ক্যাচ দেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার (৯)। পরের ব্যাটসম্যানরা আর কেউই বলার মতো কিছু করতে পারেননি। আন্দ্রে রাসেল তার বিধ্বংসী রূপ বের করার আগেই হয়েছেন মার্ক উডের শিকার। ১৬ বলে ১ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ২১ রান করে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ দেন এই অলরাউন্ডার।
ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট শিকার জোফরা আর্চার আর মার্ক উডের। জো রুট নেন ২টি উইকেট।