বাদলের হাতেই বোয়ালখালী পেয়েছে উপশহরের চেহারা

মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মঈনউদ্দিন খান বাদলের হাত দিয়েই ঐতিহ্যবাহী বোয়ালখালী উপজেলার আধুনিকতার ছোঁয়া। দীর্ঘদিন সাংসদ থাকার সুবাদে নিজ এলাকার আমূল উন্নয়ন করেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক, সেতু, নতুন সড়কের উন্নয়ন, মাদ্রাসা, মসজিদ, সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের উন্নয়নে বোয়ালখালীকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি।

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মঈনউদ্দিন খান বাদলের সংসদীয় আসনের আংশিক শহরাঞ্চল রয়েছে। এখানে আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণ করা, ষোলশহরে টেক্সটাইল এন্ড জুট ইনস্টিটিউট করা, মোহরায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়। চান্দগাঁওতে ১ হাজার কর্মজীবী নারীর বাসস্থান নির্মাণ ও অত্যাধুনিক সরকারি গুদাম নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে অনুদান।

ইউএনও বলেন, গত ১১ বছরে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় বোয়ালখালীতে প্রায় ২১৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করেছেন সাংসদ মহিউদ্দিন খান বাদল। তাঁর আমলে প্রায় ৫০টির মতো প্রাইমারি স্কুল পাকা করা হয়েছে। বোয়ালখালীতে প্রথমবারের মতো ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী সংলগ্ন এলাকার ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে বোয়ালখালীতে ফায়ার স্টেশন হয়েছে। এলাকার প্রত্যেকটি হাইস্কুলে পাকা ভবন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স করা হয়েছে। বাদুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারী করণ করা হয়েছে।

বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল আমিন বলেন, বাদল ভাই এলাকায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। যদিও আমরা উনার বেশি কাছের লোক ছিলাম না। তবুও উনার সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল না। উনি সাংসদ থাকা অবস্থায় এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। এসময় বোয়ালখালী অনেক অনুন্নত জায়গা ছিল। এখন বোয়ালখালী একটি উপশহর। এটি বাদল ভাইয়ের অবদান।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভোরে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। সংসদ সদস্য বাদলের ছোট ভাই মনির খান জানান, দুই বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন বাদল। হার্টেরও সমস্যা ছিল। দুই সপ্তাহ আগে নিয়মিত চেকআপের জন্য তাকে ভারতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে মঈনউদ্দিন খান বাদলের।

কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণ নিয়ে গত ২৫ জুন সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে চট্টগ্রামের প্রবীণ এ সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আছেন। তার মধ্যে আমি হচ্ছি বলাউল্লাহ। কালুরঘাট নতুন সেতু নিয়ে বারবার শুধু বলেই যাচ্ছি, কোনো কাজ হচ্ছে না।

বাদল বলেছিলেন, ২০১২ সাল থেকে কালুরঘাট নতুন সেতুটি নিয়ে এ পর্যন্ত চারটি দেশের বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা চালিয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড। বাকি টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।

‘কালুরঘাট নতুন সেতুটির জন্য আমি এলাকায় মুখ দেখাতে পারি না। মানুষ আমার মরা মা তুলে গালি দেন। আমি এটা আর সহ্য করবো না। যদি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কোনো সুরাহা না হয়, তাহলে আমি এ সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো’।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল।মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও বাদলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

ডিসেম্বরের মধ্যে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল। তাকে আর সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠন করা হলে তিনি এতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সংসদ ও সংসদের বাইরে কথা বলে তিনি বার বার গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন। ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নগরের লালদীঘি মাঠে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থীদের জনতার সঙ্গে পরিচয় প্রদান অনুষ্ঠানে মঈন উদ্দিন খান বাদল প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি চাটগাঁইয়া ভাষা বুঝতে পারবেন না। এ ভাষায় একটা কথা বলতে চাই।’

তার বক্তব্যের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, ‘আমি চাটগাঁইয়া ভাষা বুঝি।’

পরে মঈন উদ্দিন খান বাদল বাংলা ভাষাতেই বলেন, ‘ঢাকা থেকে আপনি যে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন— এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। কখনও কল্পনা করি নাই এটা সম্ভব হতে পারে। ১০ বছর আগে আমরা ছিলাম ফকিন্নির পুত, ১০ বছর পরে আমরা এখন রাজপুত।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!