বাদলের মৃত্যুতে দিনভর শোকস্তব্ধ শেখ হাসিনা, সংসদ শোকাকুল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মঈন উদ্দীন খান বাদল ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান রয়েছে। তিনি সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন, শান্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি যখন ভাষণ দিতেন তখন প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে যেত। মঈন উদ্দীন খান বাদল কথা বলতেন এলাকার উন্নয়নের জন্য। সবসময় তিনি সক্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এলাকাবাসীর ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি জাসদে যোগ দেন। আমরা যখন জোট গঠন করি তখন আমাদের সঙ্গে তিনি সক্রিয় ছিলেন। সাথে সাথে রাজনীতির অঙ্গনে আমরা যাঁরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, এমনকি সেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন নিয়ে ছয় দফা আন্দোলন, উত্তরা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন- প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আন্দোলন-সংগ্রামে, রাজপথে এবং এই সংসদে তাঁর সঙ্গে একসাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় তিনি যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র দু’দিন আগেও আমি তাঁর খোঁজ নিয়েছি। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী সবসময় আমাকে মেসেজ পাঠাতেন, খবর জানাতেন। দু’দিন আগেও আমি তাঁর কাছ থেকে মেসেজ পাই। আজ সকালে যখন খবরটা পেলাম, একটি বিরাট ধাক্কা লেগেছে। কারণ আমি ভাবতেই পারিনি আজ এভাবে মৃত্যুবরণ করবেন তিনি। কারণ পার্লামেন্ট শুরু হবে তিনি আসবেন এবং দ্রুত সুস্থ হতে হবে -এটা তিনি সবসময় চিন্তা করতেন। আমাদের দুর্ভাগ্য তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আমরা আর শুনতে পাব না।

মঈন উদ্দীন খান বাদলের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর মরদেহ নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের হাইকমিশন থেকে একজন কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছি।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শাজাহান খান, আ স ম ফিরোজ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।

মঈন উদ্দীন খান বাদলের কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোকপাত করেন তাঁরা। পরে তাঁর সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী গ্রামে জন্ম মঈন উদ্দিন খান বাদলের। তাঁর বাবা আহমদ উল্লাহ খান ও মা যতুমা খাতুন। স্ত্রী সেলিনা খান। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বয়স হয়েছিল তাঁর ৬৭ বছর।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চাঁন্দগাও) আসন থেকে মঈন উদ্দিন খান বাদল তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি।

ছাত্রজীবনে বাদল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। তাঁদের মুজিব বাহিনী ভারতের জেনারেল সুজন সিংহবান এর অধীনে প্রশিক্ষণ নেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের সময় তিনি ছিলেন প্রতিরোধ যোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। এরপর যোগ দেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠন করা হলে তিনি এতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!