২ লাখ মানুষ পানিবন্দি চকরিয়া-পেকুয়ায়

নামছে পাহাড়ি ঢল, বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি

পাঁচদিনের টানা বর্ষণে বন্যার পানিতে ভাসছে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা। গত কয়েকদিন থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও শনিবার থেকে উজানের পাহাড়ি এলাকা থেকে ঢল নামতে শুরু করে। চকরিয়ার একটি পৌরসভাসহ দুই উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নে অন্তত দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামীন সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

২ লাখ মানুষ পানিবন্দি চকরিয়া-পেকুয়ায় 1
চকরিয়ার বাটাখালী এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে

চকরিয়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়ক, চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়ক, কেবি জালাল উদ্দিন সড়কসহ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গ্রামীণ সড়কে গাড়ি চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।

আঞ্চলিক সড়কে ঝুঁকি নিয়ে অল্প সংখ্যক গণপরিবহন চলছে। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। চকরিয়া পৌরসভার একাংশ পাহাড়ি ঢলে ও অপর অংশ জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি রয়েছে হাজারো পরিবার।

এদিকে গত সোমবার মাতামুহুরী ব্রিজের নিচে রশি টাঙ্গিয়ে লাকড়ি ধরার সময়ে এক যুবক পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়। এখনও পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি।

সরেজমিন দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের ওপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বসতঘরগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো খাবার ছাড়া রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই গত দু’দিন ধরে।

চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামার বেঁড়িবাধটি ভেঙে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি লোকলয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এসব ইউনিয়নের নিচু গ্রামগুলোতেই পানি উঠেছে অধিক।

অন্যদিকে পৌরসভায় নালাগুলো পরিস্কার না করায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডের সিংহভাগ ঘরে পানি উঠেছে। এছাড়া বাটাখালী ব্রিজ থেকে থানার মোড় হয়ে মগবাজার পর্যন্ত জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে তলিয়ে আছে। উপজেলা ভূমি অফিস, চকরিয়া থানা বর্তমানে বৃষ্টির পানির পাশাপাশি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌরশহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেড়িবাঁধটি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এটি ভেঙে গেলে পৌরসভার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য পৌরসভার কর্মকর্তারা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা কাজ করছে জলাবদ্ধতা কমাতে। এছাড়াও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম ও কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন জানান, আমাদের ইউনিয়নগুলো মাতামুহুরী নদীর সঙ্গে লাগোয়া। এজন্য পাহাড় থেকে নেমে ঢলের পানি আগে আঘাত হানে এসব ইউনিয়নগুলোতে। এই দুই ইউনিয়নে অধিকাংশ ঘর পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। গত দু’দিন ধরে তাদের রান্নার কাজও বন্ধ। শুধু শুকনো খাবার খেয়ে রয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, ‘সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সরজমিন পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, ‘বন্যাকবলিত প্রায় এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী প্রায় দেড় লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষদের নিকস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার দেওয়ার হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও যারা ঘরবাড়ি ছেলে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছে না, সেসব পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার দিতে সকল চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি। চকরিয়ায় বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে অবহিত করে ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছি।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!