১০০ একরের ক্যাম্পাসে বর্ণিল সমাবর্তনে চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

‘আমরা আরবি ভাষা শিখতে পারলাম না, আছি শুধু ক্বেরাত প্রতিযোগিতা নিয়ে’

‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের চাকরির বাজারে বিভিন্ন ভাষা ও স্কিল থাকলে সহজেই চাকরি পাওয়া যায়। শুধুমাত্র আরবি জানা থাকলেও মধ্যেপ্রাচ্য এমনকি বিদেশি সংস্থাগুলোতে একাধিক চাকরির সুযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে মাধ্যপ্রচ্যের চেয়ে বেশি লোক আরবি ভাষায় কথা বলে। আমরা আছি শুধুমাত্র ক্বেরাত প্রতিযোগিতা নিয়ে। আমি নিজেও ছোটবেলায় ক্বেরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি, মাখরাজ শিখেছি। সুন্দরভাবে তেলওয়াত করতে পারতাম। দুই শব্দ আরবিতেও আমরা কথা বলতে পারি না। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্বলতা।’

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বেগম গুল চেমনআরা (বিজিসি) ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, ‘এদেশের এত মানুষ আমরা আরবি শিখেছি, আমরা জের যবর নোকতাসহ তেলওয়াত করতে শিখেছি। কিন্তু সেটা যদি ভাষা হিসেবে আমরা শিখতে পারতাম, মধ্যপ্রাচ্যে আমার সন্তানরাই কিন্তু রাজত্ব করত। আমরা সুযোগটা হাতছাড়া করেছি। ফিলিপাইনে ৯৯ শতাংশ খ্রিস্টান, তারা আরবি ভাষাটাকে ভাষা হিসেবে শিখেছে। ভারতে আরবি ভাষাটাকে ভাষা হিসেবে শিখেছে। পবিত্রতার খাতিরে আমরা শুধুমাত্র তেলওয়াত করতে শিখেছি। এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিন। জাতিসংঘে প্রচুর চাকরি আছে, যেখানে আমাদের সন্তানরা চাকরি করতে পারতো, যদি আরবি ভাষাটা সহজে পারত।’

২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম শহরের অদূরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বিতীয় সমাবর্তন উপলক্ষে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ শোভাযাত্রা করেন। এরপর জাতীয় সংগীত ও নিজ নিজ ধর্মীয় বন্দনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় দ্বিতীয় সমাবর্তনের।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আলোচনা সভায় একজন বক্তার বক্তব্যর রেশ ধরে প্রধান বক্তা হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের একজন বক্তা বলেছেন, উদ্যোক্তা হতে। তবে আমি কাউকে উদ্যোক্তা হতে বলি না। বর্তমান সময়ে পুঁজির অভাবে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন। উদ্যোক্তা হওয়া যে কী কষ্ট, পুঁজি সংগ্রহ করা কী কঠিন! আমি এই জেনারেশনের অংশ হিসেবে জানি। ব্যাংক আমাদের ৫ লাখ টাকাও লোন দেয় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এখন আমি যদি সারাদিন বলি আপনাকে উদ্যোক্তা হন, আপনাকে কে টাকা দিবে? যার রেঞ্জ রোভার গাড়ি আছে তাকে মার্সিডিজ কেনার জন্য ব্যাংক টাকা দিবে। ব্যাংক আমাদের কোনো টাকা-পয়সা দিবে না।’

নওফেল আরও বলেন, ‘আমাকে ১০ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ডও দেয় নাই ব্র্যাক ব্যাংক। তারপর যখন সরকারের মন্ত্রী হয়েছি ২০ লাখ টাকা ক্রেডিট কার্ডের জন্য সে রাজি হয়েছে। কারণ সে জানে আমি যদি ঋণখেলাপি হই, নির্বাচন করতে পারব না। তখন সে বিনা সিকিউরিটিতে ক্রেডিট কার্ড দিতে আসছে। বাস্তবতা হচ্ছে এটা- আমার জনগণের যে সঞ্চিত অর্থ, সেটা বিনিয়োগের নামে গুটি কয়েক ব্যাবসায়ীর হাতে যাচ্ছে। আমার সাধারণ উদ্যোক্তারা সেই সুবিধা পাচ্ছে না। এখন আমি ৫ লাখ টাকাই পেলাম না, ৫ কোটি টাকার ব্যবসা করব কোথা থেকে? তাই আমি বলব সেই পুঁজির দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, আমরা যদি দক্ষ হই আত্মনির্ভরতা সম্ভব।’

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সময় ইউরোপ, আমেরিকার ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মত দেশগুলো লুট করে জ্ঞান নির্ভর অর্থনীতি বানিয়েছে।’

উপমন্ত্রীর দাবি, এসব দেশ জ্ঞান বিতরণ করলেও নিজেদের অপকর্মের কথা কখনোই বলে না।

এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ৪ হাজার ৬৬৩ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ভালো ফলাফলের জন্য বিভিন্ন বিভাগের পাঁচজনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল, চারজনকে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ছয়জনকে চেয়ারম্যান গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

নতুন সনদ পাওয়াদের মধ্যে বিবিএর ২ হাজার ৭৬ জন, এমবিএর ৮৩৭ জন, বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৩৫৫ জন, বিফার্ম অনার্সের ২৩৩ জন, বিএ অনার্স ইন ইংলিশের ২৯৩ জন, ব্যাচেলর অব ল প্রোগ্রামের ৬৮৯ জন এবং এমএ ইন ইংলিশ প্রোগ্রামের ১০৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

এই সময় সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ডে স্টিভ জবস স্নাতকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, অন্যকে নকল করতে গিয়ে সংক্ষিপ্ত এই জীবন নষ্ট করো না। তোমার মনে যা আসে তাই করবে। তোমার বিবেক যা বলবে তাই করবে। তোমার মস্তিষ্ক যা চিন্তা করে তাই করবে। আজকের স্নাতকদের প্রতিও আমার একই আহ্বান।’

সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমেদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ।

সমাবর্তনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. এএফএম আওরঙ্গজেব। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি অনুষদের অধীনে ৬টি বিভাগ রয়েছে এবং বিভাগের মাধ্যমে ৯টি প্রোগ্রামে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!