হাবিজাবি পণ্যে ভরা উইম্যান চেম্বারের ‘ইন্টারন্যাশনাল মেলা’

এমনিতেই ক্রেতাশূন্য, যারা আসছেন তারাও হতাশ

মেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহের সুযোগ নিয়ে বেশিরভাগ কোম্পানি নানা ধরনের ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে সারা বছর ধরে নিজস্ব কারখানায় বা শোরুমে বিক্রি না হওয়া পণ্য বিভিন্ন মেলায় ‘ইন্টারন্যাশনাল’ নাম দিয়ে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা চলছে। ব্যতিক্রম হয়নি চলমান চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের উদ্যোগে আয়োজিত মাসব্যাপী ১৩তম ইন্টারন্যাশনাল ‘উইম্যানস এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ’র মেলায়ও।

মেলায় সরেজমিনে গেলে এমনই সব অভিযোগ করেন মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে দেখা গেলো, মেলার প্রবেশদ্বারে স্টলগুলো থেকে ডাক আসছে যে কোন পণ্য ২০-৩০-১০০-১৩০ টাকা। পণ্যের গায়ে ও ব্যানারে লাগিয়ে রেখেছে অনেক দোকান ‘যে কোন পণ্য ১৩০ টাকা’। আন্তর্জাতিক নাম দিয়ে সাধারণ ও হকারে বিক্রিত পণ্যে ভরপুর মেলাটি। এ নিয়ে হতাশ মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও।

জোবেদা খানম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘হাবিজাবি পণ্যের ভিড়ে মেলার কোন গুরুত্ব খুঁজে পাচ্ছি না। ১-২ টা বিদেশি কোম্পানি মেলায় স্টল বরাদ্দ নিলেই সেটাকে ইন্টারন্যাশনাল মেলা বলা যায় না।’

মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসা ব্যাংক কর্মকর্তা নাঈমা হোসাইন বলেন, ‘মেয়ে অনেক কান্নাকাটি করছিল যে কারণে এ মেলায় এসেছি। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নেবো এমন ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু এই মেলায় এসে আমি পুরো হতাশ। যে কোন নামের আগে ‘আন্তর্জাতিক’ লিখে দিলেই যে তা ‘আন্তর্জাতিক’ হয়ে যায় না তার প্রমাণ এই মেলাগুলো। আন্তর্জাতিক কেবল নামে পণ্যে দেশি হকার।’

মেলায় স্টল দেওয়া এক কসমেটিক দোকানি নয়ন বলেন, ‘এখানে ছোট ছোট প্রত্যেকটা পণ্য ৩০ টাকা। আমরা মেলার বাইরেও একই দামে বিক্রি করি। যে কারণে দেখা যায় মেলার চেয়ে বাইরেই বেশি বিক্রি হয়। হকার বা দোকানের একই জিনিস টিকেট কেটে কেন নিতে আসবে? এ কারণেই হয়তো মেলা ক্রেতাশূন্য।’

সপরিবারে আসা আলিমা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘আগের অবিক্রিত পণ্য নতুন মোড়কে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা যদি খুবই কষ্টদায়ক। যার কারণে এই সময় মেলাগুলোর প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’

শো-পিস বিক্রেতা মুমিন বলেন, ‘মেলার নামটা শুধু আন্তর্জাতিক, সব কিন্তু আমাদের লোকাল যে কারণে ক্রেতা কম এ মেলায়। অবশ্য একই দোকানে সব পণ্য পাচ্ছে এ কারণেও অনেকে মেলায় এসেছেন। এদিকে আমরা দোকান ভাড়া তুলতেও হিমশিম খাচ্ছি।’

এই বিষয়ে মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মুনাল মাহবুব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার একটা স্টলে যদি বিদেশি পণ্য থাকে তাহলে এটা ইন্টারন্যাশনাল হবে। সেক্ষেত্রে আমি মেলাকে ইন্টারন্যাশনাল বলব। আমার তো একটা স্টলে ইন্টারন্যাশনাল পণ্য আছেই মেলায় প্রত্যেকটা স্টল ইন্টারন্যাশনাল হতে হবে না।’

মেলায় দর্শনার্থী সংখ্যা কম এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ‘এ মেলা প্রায় দেড় মাস ধরে চলছে। যার কারণে দর্শনার্থী সংখ্যা একটু কম। এই মেলা ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে তার মধ্যে আশা করি মেলায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।’

চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের উদ্যোগে আয়োজিত মাসব্যাপী ১৩তম ইন্টারন্যাশনাল ‘উইম্যানস এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ’-এর মেলা চলছে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে। মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মুনাল মাহবুব।

মেলার স্পন্সর হলো বসুন্ধরা গ্রুপ, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবি, সিটি ব্যাংক, ইস্পাহানী গ্রুপ ও টেলিটক।

আরএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!