‘স্বেচ্ছায় অবসরে নাকি চাপে পড়ে?’ তামিমকে মাশরাফির প্রশ্ন

তামিমকে ফেরার আহবান বিসিবির

২০২০ সালের মার্চে মাশরাফির হাত থেকে অধিনায়কের ব্যাটন উঠে তামিমের হাতে। তারপর থেকে দলকে সফলভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে তিনি সফলতার সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) তামিমের সংবাদ সম্মেলন ডাকা ও আকস্মিক অবসরের ঘোষণা। বিদায় বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম। যা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো বাংলাদেশকেই। তামিমকে নিয়ে আবেগী বার্তা দিয়েছেন তার সতীর্থরাও।

এদিকে, তামিমের আচমকা অবসরের পর জরুরি সভায় বসেন ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শীর্ষ কর্তারা।

রাজধানীর একটি হোটেলে রাত দশটা নাগাদ শুরু হয় মিটিং। অবশ্য সে মিটিং হয় দুই ঘণ্টাব্যাপী। এরপর দিবাগত রাত ১২টার কিছুক্ষণ পরেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। শুরুতেই তামিমের আচমকা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বললেন অপ্রত্যাশিত।

পাপন বলেন, ‘আমাদের জন্য একেবারেই…অবাক হয়েছি, অপ্রত্যাশিত ছিল।’

তিনি তামিমের অগ্রজ নাফিস ইকবালকে মেসেজ দেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘তামিম কোন কারণে ইমোশনাল থেকে এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। আমরা চাই তামিম দ্রুত ফিরে আসুক। আমরা তার বিকল্প ভাবছি না।’

এদিকে, যার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ওয়ানডে অধিনায়ক হয়েছিলেন, সেই মাশরাফি বিন মর্তুজা বিশাল এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তামিমকে নিয়ে। যাতে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তামিম কি স্বেচ্ছায় অবসরে নাকি চাপে পড়ে? মাশরাফির সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো-

‘তামিম, তোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই একান্তই তোর। এটা কারও ভালো লাগলেও তোর, ভালো না লাগলেও তোর। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হবে। তবে সবচেয়ে ভালো কোনটা, সেটা তুই ছাড়া কেউই ভালো বুঝবে না। তাই তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ সম্মান জানাই।

তবে কিছু কথা জানতে মন চায়, মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে!

তোর অনেক ভক্ত হয়তো খুঁজে ফিরবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আজ খুঁজবে, এমনকি ভবিষ্যতও আরও অনেকদিন খুঁজবে। তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফিস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরের বার দেখলাম জাতীয় লীগে ওপেন করতে, খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনও হদিস নেই।

যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন তুই ছিল আমার অন্যতম ‘স্নাইপার।’ সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করেই জানিস। যেদিন দল থেকে বের হয়ে এলাম, সেদিন তুই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। পরে সারারাত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। যে কোনও সিরিজ বা সফরে তুই ছিলি আমার রুমে আড্ডার অবধারিত সঙ্গী। আরও কত শত স্মৃতি এখন মনে পড়ছে!

তোকে যতটুকু চিনি, তাতে তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি অনায়াসে পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু তা করব না, কারণ ওই যে, তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত।

তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, সেই সঙ্গে এটাও বলছি যে, তুই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা কিছু দিয়েছিস, তা আমরা আজীবন মনে রাখব। একজন তামিম হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম, কতটা সময়, কতটা মেধা আর কত ত্যাগ থাকতে হয়, তা সময় সব কিছু বুঝিয়ে দেবে।

তোর প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। পরবর্তী জীবন পরিবার নিয়ে দারুণ কাটাবি, সেই আশাই করছি। আর একটা কথা, দলের ভেতর নানা পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ নির্ভর আলোচনা এখন কে করবে, ঠিক জানি না। হয়তো কেউ করবে। তবে তুই এই জায়গায় সবসময়ই থাকবি সেরাদের সেরা।

গুড বাই মি. তামিম ইকবাল খান। একজন কিংবদন্তির বিদায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!