সিটি কলেজের দেয়াল থেকে সরে গেল সুদীপ্তের ছবি, ফেসবুকে বাবার আবেগ

২০১৭ সালে সরকারি সিটি কলেজকেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হন সুদীপ্ত বিশ্বাস। বাড়ির উঠানেই পিটিয়ে মারা হয় তাকে। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৫ বছর। এখনও ছেলে হত্যার বিচারের আশায় দিন গুনছেন চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মেঘনাথ বিশ্বাস।

ছেলের মৃত্যুর পর সান্ত্বনা হিসেবে সুদীপ্তের একটি ছবি লাগানো হয়েছিল সিটি কলেজের গেটের পাশে। কিন্তু কলেজের সংস্কার কাজে ভাঙা পড়ে সেই ছবি। তাই ছেলের ছবি পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সুদীপ্তের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস। সেই স্ট্যাটাস দেখে আশার বাণী শুনিয়েছেন কলেজ ছাত্রসংসদের সংশ্লিষ্ট নেতারা।

মেঘনাথ বিশ্বাস ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন—‘বেশ কিছুদিন ধরে সিটি কলেজে বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ চলছে। গেইটের ডানপাশে আমার ছেলের যে ছবিটা ছিল, সেটা সঙ্গত কারণেই অপসারিত হয়েছে। সিটি কলেজ আমার ছেলের সবচেয়ে প্রিয় ভালো লাগার, ভালোবাসার স্থান ছিল এবং সন্দেহাতীতভাবে সিটি কলেজ বিষয়ক কারণে আমার ছেলেকে মরতে হয়েছে। আমি প্রায় সময় ওখানে যাই, আত্মার শান্তির জন্য নীরবে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করি। মাঝে মাঝে ছবিটাকে মুছে দিই। ছবিটা এখন নাই, বুকের মধ্যে একটা গভীর শুন্যতা অনুভব করছি। আমি চেয়েছিলাম সিটি কলেজের বাউন্ডারি দেয়ালে আমার ছেলের অন্যান্য অনেকের মতো শহীদ হিসাবে স্থায়ী একটা ছবি আঁকা হউক।’

তিনি আরও লিখেন, ‘শুধু আমি চেয়েছিলাম বলছি কেন মানুষ তো এতো সহজে মরে না। মরার পরে ও আরো কত কী থেকে যায়। অস্তিত্ব কী শুধু দেহটাতেই? তার সত্তাও যে ছড়িয়ে থাকে প্রিয় কত কিছুর মধ্যে। সিটি কলেজে আমার ছেলের অস্তিত্ব, আমি অনুভব করি। শহীদ হিসাবে সিটি কলেজে ছেলের একটা স্থায়ী ছবির জন্য ভিপি রাজনকে লেখার মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছি। জানিনা কতটুকু হয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এরকম কিছু হলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। এই ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।’

মেঘনাথ বিশ্বাস সিটি কলেজের সাবেক ভিপি রাজিব হাসান রাজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন লেখাটিতে। ভিপি রাজন সেই স্ট্যাটাসের মন্তব্যে জানিয়েছেন, ‘আঙ্কেল কলেজের সংস্কার কাজ চলছে, কাজ শেষ হলে আমরা আমাদের স্নেহভাজন সহযোদ্ধার স্মৃতিচিহ্নটুকু কলেজে স্থায়ী করার চেষ্টা করব।’

এর প্রতিউত্তরে মেঘনাথ বিশ্বাস লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ। বাবারে, (২০১৩ সালে অবসর গ্রহণের পর এখনও শিক্ষকতা পেশার সাথে নিযুক্ত থেকে পরিবার চালাচ্ছি। এই হিসাবে আমি তো বাবা বলতেই পারি) আমার ছেলের স্মৃতি চিহ্নটুকু স্থায়ী হলে আমি আমরণ কৃতজ্ঞ থাকবো।’

সুদীপ্তের বাবার আবেদনের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয় সিটি কলেজের সাবেক ভিপি রাজিব হাসান রাজনের কাছে। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সুদীপ্ত আমাদের খুব স্নেহের সহযোদ্ধা ছিল। তার যে ছবিটি ছিলো সেটিও আমার উদ্যোগে লাগানো হয়েছে। যদিও কলেজের সংস্কারকাজে ছবিটি এখন নেই তবে কাজ শেষ হলে আমি অবশ্যই তা পুনঃস্থাপনের জন্য যা যা করা দরকার করব।’

‘সুদীপ্ত ছাড়াও যারা সিটি কলেজের জন্য শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যকের স্থায়ী ছবি লাগানোর ব্যবস্থা আমি নেব। যাতে করে তারা আজীবন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকেন এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের ত্যাগ সম্পর্কে জ্ঞাত হোন’— বলেন ভিপি রাজন।

২০১৭ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে হত্যার পর আসামিদের আটক করা হলেও কিছুদিন পর তারা বেরিয়ে পড়ে জামিন নিয়ে। এরপর আসামিরা রাজনৈতিক লেবাস পাল্টে যোগ দেয় আরেক গ্রুপে। যার ফলে হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন সুদীপ্তের পরিবারের সদস্যরা।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!