সাগরিকায় আবারও চট্টগ্রাম ঝড়, এবারের শিকার কুমিল্লা

বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩৮ রান করলো চট্টগ্রাম

সাগরপাড়ের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পাশের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঝড়ে মাঝেমধ্যে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে যায়। এখন শীতের মৌসুম, বঙ্গোপসাগর বেশ ঠান্ডা। তদোপরি দেশজুড়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু এরপরও পর পর দু’দিন সাগরপাড়ের এই স্টেডিয়াম দেখল প্রলয়। ঝড় যেভাবে ফুঁসে উঠে সেভাবে ফুঁসে উঠেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। নিজেদের জয়রথ যেমন ছুটছে তেমনি ব্যাটে উঠছে ঝড়। বঙ্গবন্ধু বিপিএল চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বিপিএলের তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২১ রান তুলে রেকর্ড গড়ে চট্টগ্রাম। শুক্রবার কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে শুরুতে ব্যাট করে ইমরুল কায়েসরা তুললেন বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩৮ রান। তাও মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে। রংপুর রাইডার্স গত আসরে রেকর্ড ২৩৯ রান করে।

চট্টগ্রাম-ঢাকার লড়াইয়ে চট্টগ্রামের করা ২২১ রানের পাহাড় ডিঙাতে গিয়ে ২০৫ রানে থেমে গিয়েছিল ঢাকার চাকা। কুমিল্লাও ঢাকার পথে হাঁটার চেষ্টা করেছিল। ব্যাটিং প্রলয়ে চট্টগ্রামের করা ২৩৮ রানের পর্বত পাড়ি দেয়ার প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যে ভালোই যুদ্ধ চালিয়ে যান ডেভিড মিলান। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ চট্টগ্রামের ফিল্ডারদের ব্যস্ত রেখেছিলেন মাঠের বাইরে থেকে বল কুড়িয়ে আনার কাজে। মিলানের ব্যাটিংয়ের সময় গুনে গুনে ১২ বার বাউন্ডারির বাইরে থেকে বল নিয়ে আসেন চট্টগ্রামের ফিল্ডাররা। এর মধ্যে মিলান সাতবার বল মাটির সংস্পর্শে বাইরে পাঠালেও বাকি পাঁচবার পাঠান হাওয়ায় ভাসিয়ে। মাত্র ২৬ বলে নিজের অর্ধশতক পূরণ করা মালান ৩৭ বলে ৮৪ করার পর আবারও বল বাইরে পাঠাতে গিয়ে নিজেই চলে যান মাঠের বাইরে। চট্টগ্রামের সব বোলারকে সমানতালে পিটালেও স্রোতের ব্যতিক্রম ছিলেন আগের তিন ম্যাচের চট্টগ্রামের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান রানা। নিজের প্রথম দু’ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকারী রানা নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে তুলে নেন ভয়ংকর হয়ে উঠা মালানকে।

এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছেন ইমরুল কায়েস ও ওয়ালটন। এ দুজনের জুটির উপর ভর করে চট্টগ্রাম গড়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩৮ রানের স্কোর। ছবি: আজীম অনন
এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছেন ইমরুল কায়েস ও ওয়ালটন। এ দুজনের জুটির উপর ভর করে চট্টগ্রাম গড়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩৮ রানের স্কোর। ছবি: আজীম অনন

মালানের বিদায়ের পর কুমিল্লার অধিনায়ক শ্রীলঙ্কান দাসুন শানাকা লড়াই চালিয়ে যান। মাত্র ২১ বলে তিনটি করে চার আর ছয়ে মুক্তার আলীকে টানা তৃতীয় ছক্কা মারতে গিয়ে বোল্ড আউট হয়ে যান। এর আগে অবশ্য চট্টগ্রামের আরেক তরুণ তুর্কি ইয়াসির আলী রাব্বি ১৭ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে (৭ রানের মাথায় সহজ জীবন পেয়েছিলেন) এবারের আসরে নিজেকে ব্যর্থতার খোলস থেকে বের করে আনতে পারেননি। এভাবে কুমিল্লার ছোট ছোট ইনিংস চট্টগ্রামের চতুর বোলাররা ঝড়ে রূপান্তরের আগেই থামিয়ে দেয়ায় কুমিল্লার দৌড়ও থেমে যায় ২২২ রানে। ফলে চট্টগ্রাম পায় ১৬ রানের জয়। ছয় ম্যাচে পঞ্চম জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান নিজেদের দখলেই রাখলো চট্টগ্রাম। অন্যদিকে চার ম্যাচে দুটি করে জয় আর পরাজয়ে ঢাকার সমান পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে কুমিল্লা।

এর আগে টস জিতে কুমিল্লা চট্টগ্রামকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। ওপেনার লেন্ডি সিমন্স এবং আভিস্কা ফার্নান্দো ভালোর আভাস দিলেও সিমন্স ১০ রান করে আউট হয়ে যান। এরপর দারুণ এক জুটি গড়েন বাংলাদেশ জাতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস এবং লংকান ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দো, দু’জনে যোগ করেন ৮৫ রান। দারুণ ছন্দে থাকা আভিস্কা ২৭ বলে তিন ছয় ও তিন চারে ৪৮ রান করে আউট হন।

বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ
১. রংপুর রাইডার্স – ২৩৯/৪ বনাম চিটাগাং ভাইকিং (২০১৯)
২. চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স – ২৩৮/৪ বনাম কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স (২০১৯)
৩. কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস – ২৩৭/৫ বনাম খুলনা টাইটানস (২০১৯)
৪. কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স – ২২২/৭ বনাম চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স (২০১৯)
৫. চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স – ২২১/৪ বনাম ঢাকা প্লাটুন (২০১৯)
৬. ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস – ২১৭/৪ বনাম রংপুর রাইডার্স (২০১৩)
৭. চিটাগাং ভাইকিংস – ২১৪/৪ বনাম খুলনা টাইটানস (২০১৯)

তবে ইমরুলের ব্যাট সহজে থামেনি। তিনি ৪১ বলে ৬২ রান করেন। তার দেড়শ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটের ইনিংস ছিল নয়টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো। চট্টগ্রামের হয়ে সবচেয়ে বড় ঝড়টা তোলেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। উইন্ডিজ এই ব্যাটসম্যান ২৭ বলে পাঁচ চার ও ছয়টি ছক্কায় ৭১ রান তোলেন। স্ট্রাইক রেট চোখ ধাঁধাঁনো আড়াইশ’ ছাড়ানো। শেষে নুরুল হাসানও প্রায় দুইশ’ ছোঁয়া স্ট্রাইক রেটে ১৫ বলে ২৯ রান করেন।

স্কোরটা এমন পাহাড় রূপ নেবে সেটা যে বোঝা যায়নি ১৭ ওভার শেষেও। ৪ উইকেটে তখন চট্টগ্রামের রান ১৬৬। দাসুন শানাকার ওভার থেকে দুজনই একটি করে ছক্কা মারলেন ওয়ালটন ও নুরুল। সে ওভারে এল ১৮ রান। পরের ওভারে এলেন সৌম্য সরকার। সে ওভারের প্রথম বলেই নুরুলের ছক্কা। প্রান্ত বদল করলেন পরের বলে। পরের চার বলের গল্পটা এমন—৬,৬,৬,৪। মাঝে দুটো ওয়াইড যোগ হওয়ায় সে ওভার থেকে এল ২৯ রান। শেষ ওভারের দায়িত্ব আবু হায়দার। আগের ওভারের পুনরাবৃত্তি হলো আবার। প্রথম বলে নুরুলের ছক্কা, পরের বলে এক।

তৃতীয় বলটি শুধু ওয়াইডই নয়, সঙ্গে চারও হলো। প্রথম দুই বলে ১২ রানের পর পরের দুই বলে দুই সিঙ্গেলের সঙ্গে আরেকটি ওয়াইড। ৪ বলে ১৫ রান। শেষ দুই বলে একটি চার ও ছক্কা। চট্টগ্রাম থামল ২৩৮ রানে। ওয়ালটন আর সোহানের ৩৪ বলের পঞ্চম উইকেট জুটিতে এসেছে ৯৯ রান। শেষ ৩ ওভারে এসেছে ৭২ রান।

কুমিল্লা সাত বোলার কাজে লাগিয়েও রানের চাকা থামাতে পারেনি। মুজিব উর রহমান ৪ ওভারে ৩১ রান দেন। নেন এক উইকেট। আল আমিন ও ডেভিড ম্যালন দুই ওভার করে বল করে যথাক্রমে ২৭ ও ২৫ রান দেন। আবু হায়দার রনি এককাঠি ওপরে। তিনি ২ ওভারে খান ৩৮ রান। সৌম্য সরকার ৩ ওভারে খান ৪৪ রান। উইকেট নেন দুটি। কুমিল্লা অধিনায়ক দাশুন সানাকা ৪ ওভারে খরচা করেন ৪৭ রান। তার থলেতে আসে এক উইকেট।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!