‘সাংবাদিকদের শিক্ষা দিতেই অপহরণ’— মোবাইলে ‘স্যার’কে জানাচ্ছিল অপহরণকারীরা

রেললাইনের পাশে ছিল ‘টর্চার সেল’

‘সাংবাদিকদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সরোয়ারকে তুলে এনেছি, হত্যার জন্য নয়। ও সাংবাদিক, খবরদার ওকে হত্যা করা যাবে না’— অপহরণের পর মোবাইল কথোপকথনে এমন কথা বলতে শুনেছেন উদ্ধার হওয়া সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার।

রোববার (১ নভেম্বর) রাত আটটার দিকে স্থানীয়রা সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি খাল পাশের ঝোপঝাড় থেকে গোলাম সরোয়ারকে উদ্ধার করে। এ সময় গোলাম সরোয়ারের গায়ে একটি গেঞ্জি ও আন্ডারওয়ার ছাড়া আর কিছুই ছিল না। উদ্ধার হওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যাশায়ী চট্টগ্রামের এই সাংবাদিক তার সহকর্মীদের জানিয়েছেন, ‘অপহরণকারীরা বারবার অজ্ঞাত লোকের সাথে কথা বলছিল। মোবাইলের অপর প্রান্তের লোককে স্যার স্যার করে কথা বলছিল।’

গত ২৯ অক্টোবর সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের আর খোঁজ মিলছিল না। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের পরিবার ও তার সহকর্মীরা। গোলাম সরোয়ার সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের স্টাফ রিপোর্টার এবং সিটিনিউজ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক।

অপহরণের শিকার সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার জানান, তাকে তুলে নেওয়ার পর লোহার রড, লাঠি ও গাছ দিয়ে সারা শরীরে মারধর করা হয়েছে। অপহরণকারীরা মারতে মারতে তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন— ‘আর নিউজ করবি?’

উদ্ধার হওয়ার পর হাসপাতালে শয্যাশায়ী সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে চার জনে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আমার বাইকের পেছনে বসে এক লোক আমাকে কালো হেলমেট পরিয়ে দেয়। এটি পরিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছে— এমনটি বুঝতে পারি। আমাকে যেখানে রেখেছিল, সেখানে ট্রেন চলাচলের শব্দ শুনতাম।’

সরোয়ার বলেন, ‘আমি পাঠাও বাইকে করে বুধবার রাতের ১১টায় নগরীর কাজির দেউড়ি আলমাস সিনেমার পাশে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলাম। ভিআইপি টাওয়ারের সামনে থেকে হঠাৎ জোর করে পাঠাও বাইকের পেছনে অপর একজন উঠে পড়ে। এরপর আর কিছুই মনে ছিল না আমার।’

রোববার রাত আটটার সীতাকুন্ডের কুমিরা থেকে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে উদ্ধার করার পর তাকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডের এইচডিইউ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। রাত ১০টার দিকে তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আলতো আলতো কথা বলতে শুরু করেছেন। ওই ইউনিটের চিকিৎসক ডা. ওমর আলী বলেন, ‘সরোয়ারের শরীরের ইসিজি করা হয়েছে। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ আছেন।’

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন রোববার রাতে চমেক হাসপাতালে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাংবাদিক সরওয়ারের অপহরণের বিষয়ে যে বা যারা জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনতে যা যা করণীয় সব করা হবে। এ বিষয়টি আরও তদন্তের ব্যাপার আছে।’

এদিকে রাতে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর চমেক হাসপাতালে সরওয়ারকে দেখতে যান। এ সময় তিনি তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের উদ্ধারে আমরা সন্তুষ্ট নই। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!