চট্টগ্রামে সাংবাদিক নিখোঁজের নেপথ্যে কি দুই রিপোর্ট?

অপহরণের ঘটনা ধরে নিয়েই পুলিশ এগোচ্ছে

চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার নিখোঁজের ঘটনায় রহস্য কাটছে না। এটা কি নিখোঁজ, না অপহরণ— এ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না তার পরিবার ও সহকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ মিলছে না। তার মোবাইলটিও বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের পরিবার ও তার সহকর্মীরা।

গোলাম সরোয়ার সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের স্টাফ রিপোর্টার এবং সিটিনিউজ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ব্যাটারি গলির বাহার উল্লাহ ভবনের ব্যাচেলর কোয়ার্টার থেকে বের হতে দেখেছেন আশেপাশের লোকজন। কিন্তু এরপর সারা দিনেও তার কোনো খোঁজ পাওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবার ও সহকর্মীরা সম্ভাব্য সকল স্থানে গোলাম সরোয়ারের খোঁজ করেন। কিন্তু শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই সাংবাদিকের কোনো খোঁজ মেলেনি।

সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের সহকারী সম্পাদক জুবায়ের সিদ্দিকী এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ২২৩৩) করেছেন।

গোলাম সরোয়ার কেন নিখোঁজ হলেন— এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে তার সহকর্মী সাংবাদিকদের দাবি, তাকে হয়তো অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে। তারা বলছেন, গত কয়েক দিনে তিনি তার অনলাইন পোর্টালে দুটি ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এগুলোর জের ধরে তাকে অপহরণ করা হতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন। এর মধ্যে গত ২৪ অক্টোবর প্রকাশিত একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল— ‘চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর জায়গায় ভূমিমন্ত্রীর ভাইয়ের কুদৃষ্টি।’ ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর জায়গা অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই আনিসুজ্জামান। নগরীর সার্সন রোডের জেএস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চলমান একটি ফ্ল্যাট প্রকল্পের জায়গা নিজের বাউন্ডারি ওয়াল যুক্ত করে দখলের চেষ্টা করছে। প্রকল্পের জায়গায় কাজ করতে গেলে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে এই ব্যবসায়ীকে।’ ঘটনাচক্রে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের বাসাও এই এলাকাতেই।

গত ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত তার অন্য একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল— ‘চট্টগ্রামে অভিজাতে ফের আলোচনা ক্যাসিনো’। এই রিপোর্টে শিল্পপতি ও রাজনৈতিক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে নগরীর খুলশীকেন্দ্রিক একটি ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তোলা হয়। ঘটনাচক্রে এই রিপোর্ট প্রকাশের পরদিনই তিনি নিখোঁজ হন।

এসব রিপোর্টের জের ধরে গোলাম সরোয়ারকে ‘অপহরণ’ করা হতে পারে বলে তার সহকর্মী সাংবাদিকরা অভিযোগের আঙ্গুল তুললেও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে জোরালো কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

গোলাম সরওয়ারের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, বুধবার রাত ১১টার তার সাথে সর্বশেষ কথা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে গোলাম সরওয়ার পটিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। পটিয়ায় ব্যক্তিগত কাজ সেরে তার শ্বশুরবাড়ি কমলমুন্সির হাটের মাঝিপাড়া যাবে বলে স্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সকাল ১১টার দিকে ফোন করে তার মুঠোফোন বন্ধ পান এবং বিকেলেও বন্ধ পেয়ে তিনি সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকীকে বিষয়টি জানান।

যমুনা টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ও চন্দনাইশ মিডিয়া ক্লাব-চট্টগ্রামের সভাপতি জামসেদ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গোলাম সরওয়ারের মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে তার স্ত্রী সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকীকে জানান। জুবায়ের সিদ্দিকী অফিস থেকে একজনকে বেটারী গলিতে পাঠিয়ে খবর পান, গোলাম সরওয়ার সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়েছেন। কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানান, সাধারণ ডায়েরীর পর থেকেই আমাদের একাধিক টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সম্ভাব্য সবকিছু সামনে রেখে আমরা তদন্ত করছি।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসেবে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে কারো সাথে সমস্যা তৈরি হওয়াটা আমাদের বিবেচনায় আছে। প্রাথমিকভাবে আমরা বিষয়টিকে অপহরণ হিসেবে ধরে নিয়ে কাজ করছি। দেখা যাক কতটুকু কী হয়।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!