রেলে সংগঠন আছে, প্রাণ নেই—সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সুতো সভাপতির হাতেই

খোদ নেতারাও জানেন না সংগঠনটির যাত্রা শুরুর দিনক্ষণ। সভাপতিও জানেন না, সহ সভাপতিও জানেন না। তবে কোষাধ্যক্ষ বললেন সংগঠনের যাত্রা শুরু ‘অনেক দিন আগে’। সাল জানতে চাইলে কণ্ঠস্বর থেকে ফোনে আওয়াজ আসায় বন্ধ হয়ে যায়। অনেক্ষণ পর বললেন, ‘আমি ব্যবসায় আসার আগে।’

সংগঠন আছে, প্রাণ নেই। সংগঠনটির নাম রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এক্সেসোরিজ সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের। কাগজে-কলমে স্বাধীন এমন সংগঠনের সুতো সভাপতির হাতেই। ৩০৪ সদস্যের এ সংগঠনের কোন অফিসও নেই। অথচ প্রতিবছর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বছরে শত শত কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছে এসব ব্যবসায়ীরা।

রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এক্সেসোরিজ সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের অস্থিত্বের কথা কেউ না জানলেও নির্বাচন হচ্ছে গত ৫ বছর ধরে। ২ বছর পরপর নির্বাচন হওয়ার গঠনতন্ত্রে নিয়ম থাকলেও ৫ বছরে নির্বাচন হয়েছে ২ বার। তবে শনিবার (৭ নভেম্বর) তৃতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয়বার সভাপতি হতে তৎপর বর্তমান সভাপতি ও চৌধুরী সিন্ডিকেটের স্বত্বাধিকারী ফেরদৌস হুদা চৌধুরী। অথচ সংগঠনেট গঠনতন্ত্রে তৃতীয় বার নির্বাচনের কোন নিয়ম নেই। এখানে সভাপতির এমন অনিয়মকে মেনে নিতে হচ্ছে নিয়মের মতোই। সভাপতির ব্যক্তিগত অফিসকে সংগঠনের কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সদস্যরা বললেন ভিন্নকথা। সংগঠন থাকলেও সাংগঠনিক তেমন কোন কার্যক্রম নেই। সভাও তেমন হয়নি। সংগঠনকে নিজেদের ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন সভাপতি। প্রতিবাদ করলেই সদস্য পদ বাতিলের হুমকিসহ নানা হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। আবার সদস্যদের অনেকেই জানেন না গঠনতন্ত্র কী? সেখানে কি লেখা আছে।
রেলে সংগঠন আছে, প্রাণ নেই—সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সুতো সভাপতির হাতেই 1
সংগঠনের নিজস্ব অফিস প্রসংগে রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এক্সেসোরিজ সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও মাস অটো ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকর্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের অফিস দেওয়ানহাটে। ওই অফিসটি সংগঠনের সভাপতির ব্যক্তিগত কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যয় কমাতে এবং অফিস ভাড়া বাঁচাতেই দেওয়ানহাটে সভাপতির অফিস থেকেই আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি। এটাকে অন্যভাবে না নিলে খুশি হবো।’ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু কখন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘কখন শুরু হয়েছে জানা নেই। আমরা গত ৫ বছর ধরে সক্রিয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি রেল থেকে জায়গা বরাদ্দ নিয়ে বিজিএমইএ’র মতো ভবন করতে।’

এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সংগঠনের যাত্রা শুরু ‘অনেক দিন আগে’। সাল জানতে চাইলে চুপ হয়ে যান। বন্ধ হয়ে যায় কণ্ঠস্বর। ফোনে আর কোনই আওয়াজ আসছে না। অনেক্ষণ পর বললেন, ‘আমি ব্যবসায় আসার আগে।’ গনতন্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনে কথা না বলে সরাসরি সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
রেলে সংগঠন আছে, প্রাণ নেই—সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সুতো সভাপতির হাতেই 2
জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অভ্যর্থনা কক্ষটি সাপ্লাইয়ার অ্যাসোসিয়েশন দখলে ছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু রেলের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী এমপির নির্দেশে এটি দখলমুক্ত করা হয় ২০২০ সালের শুরুতেই। এরপর অফিসটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। সংগঠনের সদস্যদের থেকে বছরে ২ হাজার টাকা করে নেওয়া হলেও দীর্ঘ দুইযুগেও একটি অফিস নিতে পারেনি সংগঠনটি। এসব টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হয় নাকি আয় করা হয়, তাও জানেন না বলে অভিযোগ অনেক সদস্যের।

এই বিষয়ে ফেরদৌস হুদা চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গতবার নির্বাচিত প্রত্যেককে এককপি করে গঠনতন্ত্রের কাগজ দেওয়া হলেও তারা অস্বীকার করলে কি বলবো। এছাড়া কয়েকবছর আগে সরকার তো বললো যতবার খুশি ততবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’ সরকার কাকে বললো তা তিনি জানাতে পারেননি। এছাড়া সংগঠনের কার্যক্রম শুরু কথা তিনিও জানেন না। তবে সংগঠনের অফিস হিসেবে তার অফিস ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেন তিনি।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!