রেলের মাল পাচার ও হামলার ৩ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ

শাস্তির বদলে অভিযুক্ত উল্টো পুরস্কৃত

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আলোচিত মালামাল পাচার ও হামলার তিন ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে রেল কর্তৃপক্ষ। মাস পার হতে চললেও এখনও পর্যন্ত কোনো ঘটনায় নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা। উল্টো শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করা হয়েছে এক অভিযুক্তকে।

আলোচিত এ তিন ঘটনার মধ্যে রয়েছে, ৫ জানুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী রেল ওয়ার্কসপ থেকে মালামাল পাচার, ১৬ জানুয়ারি রেলের পুরাতন সেল ডিপো থেকে মালামাল পাচার এবং ১৭ জানুয়ারি ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে গেটে হামলা ও আহতের ঘটনা। এসব ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে এলেও সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) স্নেহাশীষ দাশগুপ্তের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় দোষ অস্থায়ী গেটকিপারের। তবে সরকারের সম্পদ নষ্টের বিষয়ে কেন থানায় অভিযোগ করা হয়নি এ বিষয়ে আমি অবগত নই।’

গেটকিপারের ওপর হামলা, হয়নি মামলা
জানা যায়, ১৭ জানুয়ারি রেলওয়ে ষোলশহর স্টেশনে অস্থায়ী গেটকিপার জাহিদুল ইসলামের (২৭) ওপর হামলা চালিয়েছিলো টেম্পোচালকরা। ভাঙচুর করা হয় রেলের টেলিফোন ও গেট রুম। আহত হন গেটকিপার জাহিদুল ইসলাম। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

কিন্তু ওই ঘটনায় আহত ব্যক্তির পক্ষে মামলা ও সরকারি সম্পদ ভাঙচুর বিষয়ে কোনো জিডি করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনায় ষোলশহর স্টেশন মাস্টার জাফর আহমেদ মজুমদারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মালামাল পাচারের হোতা উল্টো পুরস্কৃত
৫ জানুয়ারি সংরক্ষিত এলাকা পাহাড়তলী রেলের ওয়ার্কসপ থেকে রেল নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই রেদোয়ানুর রহমান ভূয়া স্লিপে সাত জনের নামে ১৬০টি টিন বের করতে গেলে ধরা পড়ে।

কিন্তু ওই ঘটনায় সিনিয়র সিআই রেদোয়ানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর গেলেও তাকে উল্টো অস্ত্র শাখায় বদলি করা হয়। যা ‘লোভনীয় পদ’ হিসেবে পরিচিত। ফলে এ বদলিকে পুরস্কার হিসেবেই চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার এমন ‘পুরস্কারে’ হতবাক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

আবার ঘটনার তদন্তের বেলায়ও তাকে ‘ছাড়’ দেওয়া হয়। ঘটনার পরদিন তার জুনিয়র অফিসার দিয়ে তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়। সিনিয়রের তদন্ত জুনিয়রকে দিয়ে করানোর কোনো নিয়ম না থাকলেও— এ ক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে। গোয়েন্দা সিআই সালাউদ্দিন ও জেনারেল শাখার সিআই সালামত উল্লাহ জুনিয়র হয়েও অভিযুক্ত সিনিয়র সিআই-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সহকারী চিফ কমান্ডেন্ট শরিফুল ইসলাম জানান, ‘কোনো সিনিয়রের তদন্ত জুনিয়রের করার আইনগত নিয়ম নেই।’

সমঝোতায় ছাড়া ভুয়া স্লিপের মালামাল
১৬ জানুয়ারি রেলওয়ে বিভাগীয় সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক পূর্ব পাহাড়তলী পলাশ কুমার সাহার নির্দেশে পিকনিকের ঘাটতি টাকা পূরণ করতে ৬০ জনের নামে ভুয়া স্লিপ ইস্যুর মাধ্যমে ৬ টন স্ক্র্যাপ মালামাল বের করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী আটক করে। পরে সমঝোতার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার সংবাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ভিডিওসহ প্রকাশ হয়। কিন্তু এ বিষয়েও এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি রেল কর্তৃপক্ষ।

আলোচিত এই তিন ঘটনার কোনোটির বিরুদ্ধে শাস্তি তো দূরের কথা, এমনকি যথাযথ তদন্ত পর্যন্ত করেনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্মকর্তারা। তাহলে কী অপরাধ, দুর্নীতি করলে শাস্তির পরিবর্তে পুরস্কার মেলে—এমন প্রশ্ন পূর্বাঞ্চল রেল কর্মচারীদের।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!