ওপরে টিন দিয়ে ভিতরে পাচার করা হচ্ছিল মূল্যবান লোহা— যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। এমন অভিযোগের নেপথ্যে যিনি, তিনি হলেন চট্টগ্রাম রেলের উপ সহকারী প্রকৌশলী (মালামাল অধিরক্ষক)। তার এই অপকর্মে বাধা দিলে অশোভন আচরণ করা হয় রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) এমন ঘটনাই ঘটেছে রেলের পূর্বাঞ্চলে।
রেল সূত্র জানায়, ডিসিওএস পাহাড়তলীর অধীনস্থ ৬০ জন কর্মচারীকে ২ হন্দর (১০০.১৬ কিলোগ্রাম প্রায় বা ৬টি টিন) স্ক্র্যাপ টিন বেড়া দেওয়া হবে মর্মে বরাদ্দ নেন। টিন বিরাদ্দ নিতে গিয়ে দেখা যায়, ৬০ জনের পরিবর্তে স্লিপ আছে ৮৭টি। অর্থাৎ ২৭টি স্লিপ বেশি।
বরাদ্দকৃত টিন একসাথে বের করার কোন নিয়ম নেই এবং যার নামে বরাদ্দ টিন তিনি নিজে বুঝে নিয়ে স্বাক্ষর করার কথা। কিন্তু উপ সহকারী প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী (এসএসএই) অতিরিক্ত ২৭টি টিন নিয়ে নিচ্ছিলেন এবং টিনের ভেতরে করে লোহা পাচার করছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন তথ্যে রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) স্পেশাল টিম হাজির হয় ঘটনাস্থলে।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নিরাপত্তা বাহিনী মালামাল ভর্তি পিকআপটি (ঢাকামেট্রো অ ১১-২৭২৭) আটক করে। কিন্তু এতে বাধা দেন গোলাম রাব্বানী ও তার সহযোগীরা। তারা ডিপো ইনচার্জ ও ডিসিওএস অফিস থেকে আসা কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর এএসআই অমিত বিষয়টি তার সিআইকে অবহিত করেন। কিন্তু এরই মধ্যে পার করে দেওয়া হয় আরো মালামালভর্তি একটি পিকআপ।
সূত্র জানায়, রেলের উপ সহকারী প্রকৌশলী (মালামাল অধিরক্ষক) গোলাম রব্বানীর সহযোগিতায় ডিসিওএস পাহাড়তলীর প্রধান সহকারী বেদার উদ্দিন এবং আরো দুই কর্মকর্তা মিলে প্রথম ট্রিপে টিনের ভিতরে করে লোহা পাচার করেন। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী মালামালসহ (ঢাকামেট্রো অ-১১-২৭২৭) পিকআপটি আটক করে খুলশী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। এ সময় তাদের সাথে অশোভন আচরণ করা হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইন্সপেক্টর ইসরায়েল মৃধা এ ব্যাপারে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যার নামে বরাদ্দ তিনি টাকা জমা করে তার মালামাল বুঝে নেবেন। কিন্তু এখানে সেটা না করে বরং নিরাপত্তা বাহিনীর এএসআই অমিতের সাথে অশোভন আচরণ করা হয়েছে।’ চিফ ইন্সপেক্টর লোহা পাচারের বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে ডিসিওএসের উর্ধতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (পাহাড়তলী) মো. সাইফুল ইসলাম কর্মচারীদের নামে বরাদ্দকৃত টিন নিয়ে আসার জন্য অফিস থেকে বেদার উদ্দিনকে পাঠানো হয় বলে জানান।
ইতিপূর্বে আরও একবার এসএসএই রব্বানী লোহাপাচার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হলেও টাকার বিনিময়ে রক্ষা পাওয়ার বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে সিওএস বেলাল উদ্দিন সরকারের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
জেএস/কেএস