রামু-চকরিয়ায় ২ হাতির মৃত্যু নিয়ে রহস্য

কক্সবাজারের রামু ও চকরিয়ায় দুটি বন্যহাতির মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। শনিবার (২১ মার্চ) ভোররাতের দিকে রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়া এলাকায় একটি এবং চকরিয়ার খুটাখালি ইউনিয়নের পূর্বপাড়ার ঠান্ডাছড়ি এলাকায় অপর হাতিটির মৃত্যু হয় বলে এলাকাবাসী জানায়। হাতি দুটি কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন এলাকার।

দক্ষিণ গোয়ালিয়া সামাজিক বনায়ন উপকারভোগীদের সভাপতি মোহাম্মদ তৈয়ব জানান, ‘ভোরে নামাজের পর তিনি স্থানীয় মোহাম্মদ হোছনের ধানক্ষেতে হাতিটিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি বন বিভাগ, জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীকে খবর দেন।

স্থানীয়রা জানান, যেখানে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে সেখানে বন বিভাগের মালিকানাধীন প্রায় ৪ একর জমি দখলে রয়েছে স্থানীয় মোহাম্মদ হোছন। সেখানে ৩০ গজের মধ্যেই এক বছর আগে মোহাম্মদ হোছনের স্ত্রী মরিয়ম খাতুনকে হত্যা করে এই হাতিটি। একইসাথে তার নাতি রায়হানকেও গুরুতর আহত করে। হাতিটি প্রায় সময় সেখানে খাবারের সন্ধানে আসতো। হাতিটির উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন মোহাম্মদ হোছন।

এলাকাবাসী জানান, হাতিটিকে বিদ্যুতের শক দিয়ে মারা হয়েছে। আবার অনেকেই বলছেন কীটনাশক দিয়েই হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকার মোহাম্মদ হোছন পলাতক।

রামু উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. শাহজাদা মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, ‘ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের ডা. মোস্তাফিজুর রহমানসহ আমরা হাতিটির আলামত নিয়েছি। তা আমরা ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পাঠাবো। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসলেই মৃত্যুর আসল রহস্য জানা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাতিটির লাংসে পানি জমেছে এবং পোকা পাওয়া গেছে।’

অপরদিকে খুটাখালীর পূর্বপাড়ার আবদুল্লাহ জানান, কৌশলে লোকজন হাতিগুলোকে মেরে ফেলছে। কারণ এসব হাতিও কম মানুষ মারছে না।

সরেজমিন পরিদর্শন শেষে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ বিষয়ক সেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘নির্বিচারে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে। যেখানে হাতির মৃত্যু হয়েছে সেখানে হাতির আবাস থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বন উজাড় করা হয়েছে। খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল হারানোয় হাতিগুলো লোকালয়ে ছুটে আসছে। আর মানুষ নির্মমভাবে তাদের হত্যা করছে। তিন মাসের ব্যবধানে কক্সবাজারে তিনটি হাতির মর্মান্তিক মৃত্যু হলো।’

দ্রুত হাতির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা না হলে এসব হাতি বাঁচানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খুটাখালীর হাতিটি হয়তো আরও দুদিন আগে মারা গেছে। তবে আমরা খবর পেয়ে আজ ভেটেনারি সার্জন দিয়ে আলামত সংগ্রহ করেছি। ধারণা করছি, বার্ধ্যক্যজনিত কারণে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।’

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি দেখে এসেছি। আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী পুরুষ প্রজাতির হাতি এটি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মূল ঘটনা জানা যাবে। এরপরও আমরা সব বিষয় মাথায় নিয়ে খোঁজ খবর রাখছি।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!