মানুষ অনাহারে, চেয়ারম্যানের দেখা নেই সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশায়

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণে বেশ কয়েকদিন ধরে লকডাউনে আছে পুরো একটি গ্রাম— পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগর। করোনা ঠেকাতে সেখান প্রশাসন ঘোষণা করেছে সর্বাত্মক লকডাউন। কিন্তু লকডাউনের বেষ্টনীর ভেতরে থাকা মানুষগুলোর দিনরাত কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে। অথচ সেদিকে কোনো নজরই নেই পশ্চিম ঢেমশার ইউনিয়ন পরিষদ ও সাতকানিয়ার উপজেলা প্রশাসনের। লকডাউন ঘোষণা করেই দায় সেরেছে তারা।

গত ১২ এপ্রিল থেকে সাতকানিয়া করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি সিরাজুল ইসলামের মৃত্যুর পর থেকে সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ইছামতি আলীনগর গ্রামের ৩৪২টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সাতকানিয়ার উপজেলা প্রশাসন। তখন থেকে ৩৪২টি পরিবার একটি বেষ্টনীতেই কার্যত বন্দি। তারা কোথাও বের হতেও পারছে না। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ পরিবারের চুলোয় আগুন পর্যন্ত জ্বলছে না। অনেকে ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে লকডাউন ভেঙ্গে গোপনে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে আরেক ঝুঁকি— করোনা বিস্তারের বিপদ।

লকডাউন করা এলাকায় বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের লোক জানার পরেও ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা উপজেলা পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসন, এমনকি এলাকার কোন বিত্তশালীও লকডাউনের বেষ্টনীতে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষের কোন খোঁজ খবর রাখেনি। তবে এলাকার চেয়ারম্যানের ওপরেই মানুষের ক্ষোভ বেশি।

পশ্চিম ঢেমশার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান আবু তাহের জিন্নাহ করোনার আগে তো নয়ই, করোনা শনাক্ত হওয়ার পরেও এলাকাবাসীর কোনো খোঁজ রাখেননি। এমনকি এলাকার একটি বড় অংশ লকডাউন ঘোষণা করার পরেও তিনি এলাকায় আসলেন না। না আসলেও লকডাউনে থাকা লোকজনকে তার পরিষদ থেকে সহায়তা করতে পারতেন, তাও তিনি করেননি। এমনকি একটি ফোন করেও তিনি খোঁজ নেননি এলাকার লোকগুলোর কী অবস্থা। কিভাবে কাটছে তাদের দিন।’

আরেকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ‘চেয়ারম্যান শুধু উপজেলার প্রকল্প নেওয়ার জন্য উপজেলায় আসা-যাওয়া করেন, এলাকায় কখনও আসেন না। তিনি চট্টগ্রাম শহরে বসে সিএন্ডএফের ব্যবসা এবং নিজের কিছু অনুগত লোক দিয়ে নির্বাচনী এলাকা জিম্মি করে রেখেছেন।’

ইছামতি আলীনগরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এলাকার মানুষ না খেয়ে মরুক আর করোনায় মরুক— তাতে জিন্নাহ চেয়ারম্যানের কিছু যায় আসে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘চেয়ারম্যান আবু তাহের জিন্নাহ মূলত বরাদ্দের চেয়ারম্যান। এলাকায় তিনি আসেন না ঠিক। কিন্তু বরাদ্দ নিতে উপজেলায় ঠিকই যোগাযোগ রাখেন। এলাকায় কার কী সমস্যা এ নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।’

৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরমান বলেন, ‘লকডাউন করা এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখার জন্য আমি দুজন লোক সবসময় ডিউটিতে রেখেছি তাদের কোন কিছুর দরকার হলে কিনে এনে দেওয়ার জন্য। আমি নিজেই গরিব, তারপরও যতটুকু পারি চেষ্টা চালাচ্ছি।’

এই বিষয়ে পশ্চিম ঢেমশা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত মনির চৌকিদারকে দিয়ে লকডাউন এলাকায় অবাধে বিচরণ করতে দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বার মিলে সাতকানিয়ায় করোনার বিস্তার ঘটিয়েছেন।
করোনায় মৃত ব্যক্তির গোসলের পর আমি সন্দেহ করেছিলাম চৌকিদার মনিরের বিষয়ে। তখন চেয়ারম্যানকে বলেছিলাম তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে দিতে। কিন্তু চেয়ারম্যান কথা শোনেননি। উল্টো তাকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে মারা করেন।’

মফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার এমন দুর্যোগে এলাকার চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি এবং খেটে খাওয়া মানুষের পাশে না দাঁড়ানো আসলেই লজ্জাজনক। তার চিন্তাভাবনা এমন— মানুষ মরলে মরুক, আমি ভালো থাকলেই হলো।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের জিন্নাহকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!