‘মন্দের ভালো’ নিরাপদ সড়ক আইন কার্যকর শুক্রবার থেকে

গত বছর ২৯ জুলাই ঢাকায় বাসচাপায় রমিজউদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হলে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। তাদের দাবির মুখে নিরাপদ সড়ক আইন ২০১৮ সংসদে পাশ হলেও, গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের তোপের মুখে আইনটি কার্যকর করেনি সরকার।

এতদিন মোটরযান আইন ১৯৮৩ দিয়ে চলে আসছিল সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ। গণপরিবহন সেক্টরে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে সড়কে বাড়তে থাকে বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার । এ আইন অনুযায়ী সড়কে মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ দশ বছর কারাদণ্ড ও শাস্তি জামিন অযোগ্য হলেও, এরশাদ সরকারের আমলে পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন করে আইনে সাত বছর কারাদণ্ড ও শাস্তি জামিনযোগ্য করে। তারপরও বিদ্যমান আইনে পদক্ষেপ নিলে গণপরিবহন নেতারা ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতো।

গত বছর ২৯ জুলাই ঢাকায় রমিজউদ্দীন কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হলে সরকার তড়িঘড়ি করে ৩০২ ধারায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮ পাশ করে। এছাড়া আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের ঘটনায় অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড, চালকদের লাইসেন্স (১২ পয়েন্ট) ভিত্তিক করা, লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ, আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাস কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা, গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বললে একমাসের কারাদণ্ড ও পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানা, পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও পঁচিশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

যদিও সাধারণ মানুষের দাবি ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় যে কোনো নিহতের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাশ করা। মন্দের ভালো এই আইনটি পাশ করার পর তা কার্যকর না করার দাবিতে গণপরিবহনে ৪৮ ঘন্টা ধর্মঘট সহ নানান কর্মসূচি পালন করে যানবাহন মালিক-শ্রমিকরা। পরিবহন নেতারা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রদ, শাস্তি জামিনযোগ্য করা ও জরিমানা কমানোর জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল। ফলে সরকার আইনটি কার্যকরে সময় নিয়ে তিনজন মন্ত্রীকে সদস্য করে কমিটি গঠন করে।

তবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মিছিল ভারি হওয়ায় ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ মানুষের চাপ বাড়ার কারণে সরকার আপাতত কোনো ধরনের সংস্কার ছাড়াই আইনটি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়। আইনটি কার্যকর হলে গণপরিবহনে কিছুটা শৃঙ্খলা ফেরা ও চালক- মালিক, হেলপার ও নেতাদের আইন মানার মানসিকতা সৃষ্টি হবে। তবে আইনটি কার্যকর করার পর গণপরিবহন নেতারা আবারো ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারে- এমনটিই ধারণা সাধারণ মানুষের। এর কারণ গণপরিবহন সেক্টরের নব্বইভাগ গাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, গত নভেম্বরে আইনটি পাশ করার পরও এতদিন আইনটি কার্যকর করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় শেষ পর্যন্ত আইনটি কার্যকর হচ্ছে। মালিক, চালক, পথচারী, যাত্রী সবাইকে আইন মানতে হবে। সবাই যদি আইন মানেন তাহলে আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ হবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, নতুন আইনটি একপেশে। এখানে যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এই আইন দ্বারা সড়কে কাঙিক্ষত শৃঙ্খলা পূরণ সম্ভবত হবে না। পরিবহন সেক্টর চারটি স্তম্ভ সরকার, মালিক, চালক ও যাত্রীর উপর নির্ভর করে। কিন্তু এখানে যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। আমরা আইনটিকে মন্দের ভালো মনে করি।

সিএম/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!