ভেসেছে ৯ কল্পজাহাজ, বাঁকখালীর দুই তীরে হাজারো মানুষের মিলনমেলা

কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীতে ভাসানো হয়েছে নয়টি কল্পজাহাজ। বাঁশ, কাঠ, বেত এবং রঙিন কাগজের উপর কারুকাজে তৈরি কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসবকে ঘিরে বাঁকখালী নদীর দুই তীরে বসেছে হাজারো মানুষের মিলনমেলা।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ঐতিহ্যবাহী কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসব।

সূত্রমতে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে জাহাজ ভাসানো উৎসবের আয়োজন করা হয়। মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও এ জাহাজ ভাসা অনুষ্ঠানে হিন্দু, মুসলিম এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অংশগ্রহণে উৎসবস্থল হয়ে ওঠে সার্বজনীন।

সরেজমিনে উৎসবস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচ-ছয়টি নৌকার উপর বসানো হয়েছে এক-একটি কল্পজাহাজ। রঙ-বেরঙের কাগজ আর বাঁশ-কাঠের অপূর্ব কারুকাজে তৈরি প্রতিটি জাহাজই নজরকাড়া। আর আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলী আর বৈচিত্র্যে ভরা প্রতিটি জাহাজেই বাজছে বুদ্ধ কীর্তন-বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘের নাম সবাই বলো রে ‘বুদ্ধের মতো এমন দয়াল আর নাইরে’। আবার কোনো কোনো জাহাজে নানা বাদ্য বাজিয়ে তারা নাচছে আর গাইছে। নদীতে ভাসতে ভাসতে জাহাজগুলো যাচ্ছে নদীর এপার থেকে ওপারে।

এদিকে বৌদ্ধরা জানায়, গত ৩ অক্টোবর বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহা বিহারের অধ্যক্ষ পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর মহাপ্রয়াণে বৌদ্ধ সমাজে এখনো শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। যে কারণে এবার উৎসবের আমেজ কম।

তারা আরো জানায়, এবার ভাসানোর জন্য হাই-টুপি, শ্রীকুল, পূর্ব মেরংলোয়া, জাদী পাড়া, উত্তর মিঠাছড়ি, হাজারীকুল, উত্তর ফতেখারকুল, দ্বীপ শ্রীকুল, পূর্ব রাজারকুলসহ ১০টি কল্পজাহাজ তৈরি করা হলেও মেরংলোয়া গ্রামের জাহাজটি উৎসবস্থলে আনা হয়নি। অন্যদিকে হাইটুপি গ্রামের জাহাজটিও নদীতে আনা হলেও ভাসানো হয়নি।

ভেসেছে ৯ কল্পজাহাজ, বাঁকখালীর দুই তীরে হাজারো মানুষের মিলনমেলা 1

স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান জানান, এটি সত্যিই এক প্রাণবন্ত উৎসব। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না, কল্পজাহাজগুলো কতটা দৃষ্টিনন্দন হয়, এ উৎসবের রূপ কেমন। এই জাহাজ ভাসা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে খুবই আনন্দ উপভোগ করেছি।

রামু আর্য্যবংশ ভিক্ষু সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান প্রিয়রত্ন মহাথের জানান, ২০০ বছর আগে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে এ জাহাজ ভাসানো উৎসবের প্রচলন হয়। ওই দেশের মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবেরর আয়োজন করেন। এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমায় একসঙ্গে মিলিত হবার জন্য এ আয়োজন চলতো। সেখান থেকে বাংলাদেশের রামুতে এ উৎসবের প্রচলন। প্রায় শতবছর ধরে রামুতে মহাসমারোহে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে বলে জানান অনেকেই।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!