বিস্ফোরণে সিলিন্ডারের টুকরো উড়ে পড়ল চা দোকানে, মুহূর্তেই লাশ ১ ব্যক্তি

বোনের স্বামীর দোকানে বসে চা পান করছিলেন সামশুল আলম। সময় তখন বিকাল সাড়ে ৪টা। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে। প্রায় আধ কিলোমিটার দূরের সেই বিস্ফোরণের জায়গা থেকে অক্সিজেন সিল্ডিন্ডারের একটি লোহার টুকরো দোকানের টিন ভেদ করে এসে পড়ে সামশুল আলমের ওপর। ঘটনাস্থলেই মারা যান পাঁচ সন্তানের জনক সামশুল।

জরুরি বিভাগে অনুসন্ধান রুমে মাথা নিচু করে বসে আছেন সামশুলের ছেলে রায়হান। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। পাশেই বসে থাকা তার বোনের স্বামী ইউসুফ জানান এসব কথা। তিনি আরও জানান, সামশুল আগে ব্যবসা করতেন। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। তার গায়ে যখন সিল্ডিন্ডারের ভাঙা অংশ পড়ে, তখন মাথা ফেটে দোকান রক্তে ভেসে যায়।

শনিবার (৪ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের একজন ফরিদুল আলম (৪০)। সামশুলের ছেলে রায়হানের ঠিক আগের বেঞ্চে বসে তিনি স্বামী হারানোর শোকে বিলাপ করছিলেন।

অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণে ফরিদুলের বাম হাত উড়ে যায়। এরপর তিনি পকেট থেকে ফোন বের করে কল দেন স্ত্রী রাশেদা বেগমকে (৩৫)। এই সময় ফরিদুল বলেন, বিস্ফোরণে তার বাম হাত উড়ে গেছে। কিছুক্ষন পরেই হয়তো মারা যাবেন। বাচ্চাদের যেন দেখে রাখেন।

এরপর থেকে স্বামীর ফোন নম্বরটি বন্ধ পান রাশেদা। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে দেখেন স্বামী আর নেই। হাসপাতালে বসে আহাজারি করতে থাকেন তিনি। রাশেদা জানান, তাদের সংসারে তিন মেয়ে।১৩ বছর ধরে তার স্বামী ফরিদুল অক্সিজেন প্ল্যান্টের গাড়ির হেলপারের চাকরি করতেন। তাদের বাড়ি সীতাকুণ্ডের মধ্যম সলিমপুরের ফৌজদারহাট বাংলা এলাকার সু্বেদার বাড়ি।

এই ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন একই এলাকার রতন (৩২)। তবে আরও তিনজনের পরিচয় জানা যায়নি।

এই পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে আছেন। তাদের ভর্তির পর অপারেশনের জন্য চারতলার ওটিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভরতি করা হয়েছে চারজনকে। এদের মধ্যে প্রভাষ নামের একজনকে আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে) নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসক তন্ময় জানান, সীতকুণ্ডের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের মাথার আঘাত গুরুতর। সিটিস্ক্যান করতে পাঠানো হয়েছে আহতদের। আর একজনকে পাঠানো হয়েছে আইসিইউতে। তার অবস্থা গুরুতর। আরও কয়েকজন আহত ক্যাজুয়ালিটিতে ভরতি রয়েছেন।

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!