বিসিবির সিকিউরিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দর্শকের মাঠে প্রবেশ

ঢাকা-সিলেটের পর চট্টগ্রামেও ঘটলো এই ঘটনা

বিসিবি যেকোনো আন্তর্জাতিক আসরে একগাদা সিকিউরিটি লোক নিয়োগ দেয়। কোন প্রফেশনাল সিকিউরিটি দলের সদস্য না হলেও তাদের হাবভাবে মনে হয় তারা বিশ্বের সেরা সিকিউরিটি টিমের সদস্য। ওদের সাথে আর যা থাকুক, একটি ওয়াকিটকি অবশ্যই থাকবে। যেটি দিয়ে অকারণে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে একটি ‘ভাব’ আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা যে কতো বড় নিধিরাম সর্দার সেটি আরেকবার দেখা গেল চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।

দ্বিতীয়দিনের সকাল। চট্টগ্রাম টেস্টের তখন ১০৭ নম্বর ওভারের খেলা চলছে। সাকিব আল হাসান বল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠিক এমন সময় হঠাৎ তাকে থমকে যেতে হলো! মাঠের পূর্ব কোন থেকে গ্যালারি টপকে একজন দর্শক তার দিকে ছুটে আসছেন! দুর থেকে দৌড়ে একেবারে সাকিবের কাছাকাছি চলে এলেন তিনি। সামনে দাড়িয়ে জোরে একটা স্যালুট ঠুকে দিলেন!

হাতে ধরা রুমাল থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করলেন! সাকিবের সামনে হাঁটু গেঁড়ে সেই গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দিলেন। আম্পায়ার-সাকিব সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ফ্যালফ্যাল করে।

নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে কিভাবে এই দর্শক মাঠে ঢুকে পড়লেন? সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। চারধারে এতো কড়া নিরাপত্তা! এতো পুলিশ! ওয়াকি-টকি হাতে বিসিবি’র এত্তো এত্তো সব কর্মী। কিন্তু কাজের সময় সবাই কোথায় গেলেন। কোনো সাড়া শব্দই যে নেই। অনায়াস কায়দায় মাঠে ঢুকে পড়া সেই দর্শক সাকিবকে স্যালুট করে দাড়িয়ে রইলেন বেশ খানিকক্ষণ। খেলা বন্ধ হয়ে গেলো!

এমন সময় হঠাৎ যেন মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিসিবির কর্মীরা মাঠের অন্যপ্রান্ত থেকে দৌড়ে ঢুকেন। মাঠে থাকা সেই দর্শককে জড়িয়ে ধরেন। তার কলার টেনে তাকে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে নিয়ে আসেন। সেই দর্শকও যেন এসময় ‘হার’ মেনে নিলেন। তাকে টেনে হিঁচড়ে নিরাপত্তা কর্মীরা মাঠের বাইরে নিয়ে যান। পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছিলো।

বিসিবির সিকিউরিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দর্শকের মাঠে প্রবেশ 1
ফুল দিয়ে ‘ভালোবাসা’ প্রদানের পর সাকিবকে জড়িয়েও ধরেন সেই ‘ভক্ত’। পরে বিসিবির ‘অকারণে তৎপর’ সিকিউরিটির এক সদস্য এসে নিয়ে যান তাকে। ছবি: আজীম অনন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। প্রিয় খেলোয়াড়কে আলিঙ্গন করতে কিংবা তার তার সাথে একটি সেলফি তুলতে ভক্তদের মাঠে ছুটে আসার ঘটনা আগেও দেখা গেছে। ২০১৬ সালে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ চলাকালীন এক দর্শক ঢুকে মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছিল গেল বছর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম দিনে হুট করেই এক কিশোর পূর্ব গ্যালারির গ্রিল টপকে ঢুকে পড়ে মাঠে। সোজা দৌড়ে জড়িয়ে ধরে মুশফিকুর রহিমকে। মুশফিকও ভক্তকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সেই সাথে নিরাপত্তারক্ষীদের অনুরোধ করলেন এই ‘অবাধ্য’ ভক্তকে কিছু না বলতে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সেই টেস্টে পর পর দুদিন এমন ঘটনা ঘটে।

ক্রিকেটে, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভেন্যুগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এমন কড়াকড়ি থাকে, যে কখনো কখনো বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে। খেলোয়াড়, আম্পায়ার ছাড়া সীমিত সংখ্যক মানুষেরই মাঠে ঢোকার অনুমোদন থাকে।

কোন সাংবাদিকতো দূরে থাক, সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট ম্যাচের সাথে জড়িত বহু কর্মকর্তাই মাঠে ঢোকার সুযোগ পান না। আর গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের তো মাঠের ভেতরে ঢোকার সুযোগই নেই। সেখানে এভাবে ভক্তদের ঢুকে পড়া নিঃসন্দেহে অভাবনীয়ই। এই ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ জহুর আহমেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ম্যাচ চলাকালীন এত এত নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়োগ দেওয়া হয় তারা কি করেন?

ভাগ্য ভালো মাঠে ঢুকে পড়া সেই দর্শক কোনো খেলোয়াড়কে আহত করেনি। তবে এই ঘটনা চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ‘বুড়ো আঙ্গুল’ দেখালো!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!