বাড়ির আঙিনায় প্রতিরাতে ৩০০ মানুষের হাতে সেহেরি তুলে দেন যুবলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত

সন্ধ্যার পরই শুরু হয় সেহেরি রান্নার বিশেষ আয়োজন

পবিত্র রমজানের কোনো একদিন রাতে সেহেরির আগ মুহুর্তে বাসায় ফেরার পথে এক ব্যাচেলরের হাতে বন-কলা দেখে তিনি অসুস্থ কিনা জানতে চাইলাম। তিনি জানান, ‘হোটেলে লাইন ধরে খেতে হয়। তাছাড়া অফিস শেষে বাসায় এসে রান্না করার মত শক্তি থাকে না। তাই এসব দিয়ে সেহেরি সেরেনি’। সেদিন সেই ব্যচেলেরের সেহেরির খাবার দেখে মন কেঁদে উঠলো। আমার ঘরে সেহেরিতে হরেক রকমের খাবারের আয়োজন থাকলেও এক ব্যাচেলর প্রতিবেশীর এমন দশা আমাকে খুব ভাবিয়েছে। নিশ্চয় তার মত এমন লাখো মানুষ সেহেরি সারছেন এভাবেই। সেদিন ভাবলাম সেহেরির খাবারের ব্যবস্থা করলে নিশ্চয় শ্রমজীবী, ব্যাচেলরসহ এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের রোজা রাখার একটি বড় খোরাক হবে। এরপর শুরু করি বাড়ির আঙিনায় সেহেরি খাওয়ানোর আয়োজন।

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার আলকরণ কবরস্থানের পাশে হাজী বাড়ি এলাকায় আমার নিজ বাড়ির আঙিনায় শুরু করি সেহেরি খাওয়ানোর আয়োজন। ২০১৯ সালের রমজান থেকে শুরু করি এই আয়োজন। প্রথমদিকে ৪০ থেকে ৭০ জনের আয়োজন হলেও বর্তমানে তা বৃহৎ আয়োজনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ পর্যন্ত মানুষের সেহেরির আয়োজন হয়ে থাকে। নিজের সাধ্য মতো এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষের জন্য এই আয়োজন করেন থাকি।’
বাড়ির আঙিনায় প্রতিরাতে ৩০০ মানুষের হাতে সেহেরি তুলে দেন যুবলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত 1
জানা গেছে, প্রতিদিন দুটি এতিমখানার অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন সেহেরি করেন। এদের বাইরে এলাকাবাসী, আশপাশের এলাকার শ্রমজীবী মানুষও সেহেরিতে অংশ নেন। তবে যত মানুষ বাড়ছে আয়োজনও বাড়ছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ইফতারের পর থেকে ধীরে ধীরে রান্নার কাজ শুরু করছেন দু’জন বাবুর্চি ও তাদের একজন সহযোগী। রান্না-বান্না শেষে এলাকার স্বেচ্ছাসেবী ৮ থেকে ১০ জন কিশোর ও যুবক মিলে অতিথিদের জন্য পরিপাটি মাদুর ও দস্তারখানের ব্যবস্থা করছেন। রাত আনুমানিক ২টা থেকে শুরু হয় খাবারের আয়োজন। প্রতিবারে ৭০ থেকে ৮০ জন লোক সেহেরি করছেন। এভাবেই এই আয়োজন চলে ফজরের আযানের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। তবে ক্লান্তিহীন স্বেচ্ছাসেবীরা অতিথিদের সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় না নিয়ে তাদের অতিথির মতই আতিথেয়তা করছেন। থেমে নেই ইয়াসির আরাফাতও। তিনিও অতিথিদের গ্লাসে পানি ঢেলে দেওয়া থেকে শুরু করে থালায় খাবার দেওয়ার কাজেও সহযোগিতা করছেন।

এই সময় কথা হয় ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে। ব্যস্ততার ফাঁকে তিনি বলেন, ‘সেহেরি আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকের মত কাজ করতে ভাল লাগে, তাই নিজেই খাবারে পরিবেশন করছি। এছাড়া এখানে আমার রুচি অনুযায়ী মানুষকে খাবার খাওয়ানো হয়। কারণ আমার পরিবারের সকলে এই আয়োজনের খাবার খেয়ে রোজা রাখেন।’

নিজের রুচি অনুযায়ী সেহেরি আয়োজন কারা হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেদিন আমার মাছ খেতে ইচ্ছা করে, সেদিন মাছ দিয়ে সেহেরির আয়োজন হয়। যেদিন মাংস খেতে মন চায়, সেদিন মাংস দিয়ে হয় সেহেরি আয়োজন। মাছ-মাংস খেতে গিয়ে বিরক্তি চলে আসলে ডাল-ভর্তার আয়োজনও হয়ে থাকে এখানে। গত কয়েক সপ্তাহ আগে পরিবেশ কিছুটা ঠাণ্ডা থাকায় খিচুড়ির আয়োজনও হয়েছিল।’

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও সেহেরি করতে দেখা গেছে এই আয়োজনে। এই বিষয় জানতে চাইলে ইয়াছির আরাফাত বলেন, ‘এই বছরের নতুন সংযোজন এটি। রোজার প্রথম দিকে ভিন্ন ধর্মালম্বী কয়েকজন ভাই-বোন গেটের আশপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখি। কিন্তু তাদের মনের সংকোচের কারণে ভেতরে আসতে পারছিলেন না। সেহেরি খাবেন কি-না জানতে চাওয়ায় তারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেন। সেদিন থেকে সংকোচ ছাড়াই তাদেরও সামিল করা হয় সেহেরি আয়োজনে। যা আমার এই আয়োজনের সার্থকতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।’
বাড়ির আঙিনায় প্রতিরাতে ৩০০ মানুষের হাতে সেহেরি তুলে দেন যুবলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত 2
আয়োজনে খাবার সংকট হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদিন মানুষ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা খাবার সংকটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। সেদিন আম্মা গোপনে রান্নার ব্যবস্থা করে বেশ যোগান দিয়েছিলেন। আম্মাকে জানাতেই তিনি ফ্রিজ থেকে তিন কেজি রান্না করা গরুর মাংস বের করে দিয়েছিলেন। এই খাবার দিয়ে টানাটানি করে ২০ থেকে ২৫ জন খেয়েছিল। এছাড়া আম্মার গোপনে রান্না করা মুরগির মাংসসহ নানা পদের খাবার সেহেরি আয়োজনে বেশ সাপোর্টিভ হয়েছিল।’

শুধু সেহেরি আয়োজনই নয়, করোনাকালে অসহায় দুস্থ মানুষের দ্বারে দ্বারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন আরাফাত। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যতটা সামর্থ্য দিয়েছেন, মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও আরও কোনো ভাল উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে তাতেও সহযোগিতার চেষ্টা করবো। আর দেশের মানুষের উন্নয়নে তরুণ সমাজের এগিয়ে আসতে হবে। দেশনেত্রী শেখ হাসিনার শক্তিতো আমরাই। তার নেতৃত্বে, তার বৈঠা ধরতে তরুণ সংগঠকেরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানবিক কাজে এগিয়ে না আসলে দেশের নিম্নে আয়েরসহ আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন কিভাবে হবে?’

আরএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!