চীনা নাবিক বন্দরে নামা মানা, নির্দেশনা শীঘ্রই

করোনা ভাইরাস

‘করোনা ভাইরাস’ রুখতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের জেটিতে কোন ধরনের সর্তকর্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে জাহাজেই নাবিক ও কর্মকর্তা কর্মকচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে। তবে চায়না থেকে আসা জাহাজের নাবিকদের বন্দরে নামতে না দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন। শিপিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে কড়াকড়ির চেয়েও পর্যাপ্ত সর্তকর্তার দাবি জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১০টি জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এরমধ্যে নিয়মিত চীন থেকে আসা জাহাজ থাকছে দুই থেকে তিনটি। প্রতি জাহাজে ৩৫-৪০জন ক্যাপ্টেন-প্রকৌশলী থাকেন। তাদের অনেকেই জাহাজ থেকে নেমে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করছে। কিন্তু থার্মাল স্ক্যানার বা এই কোনো ধরনের মেডিকেল চেকআপ ছাড়াই তারা বন্দর থেকে নগরে ঢুকছে।

জানতে চাইলে বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন জাহাজ ভিজিট করে রির্পোট দেওয়া হচ্ছে। আমরা তা প্রতিদিন দেখি। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সব আমরা দেখি। এখনো করোনা ভাইরাসের মতো কিছুই পাইনি। পরশু দুটি জাহাজ চায়নার এসেছে। কিন্তু তারা ইউরোপ ঘুরে এসেছে। তাই কিছুই সন্দেহজনক পাওয়া যায়নি। তবে আমরা সর্তক আছি।’

তিনি বলেন, ‘চায়না থেকে আগত জাহাজ শতভাগ পরীক্ষা করা হচ্ছে। মৌখিকভাবে প্রস্তাব রেখেছি চায়না থেকে আসা জাহাজের লোক যেন বন্দরে নামতে না দেয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
তিনি আরো বলেন, গত সোমবার দুটি চীনা জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়েছে।করোনা ভাইরাস চেক করার জন্য আমাদের কাছে বিশেষ যন্ত্র থার্মাল স্ক্যানার বা ইনফ্রায়েড স্ক্যানার নেই। এরপরও জাহাজের ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে এই ধরনের সংক্রমিত রোগ আছে কিনা লিখিতভাবে নিই। লিখিত পাওয়ার পর নাবিকদের মধ্য থেকে আমরা র্যা ন্ডম স্যাম্পল করে পরীক্ষা করে দেখি। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো রোগীর সন্ধান মিলেনি।

মোতাহার হোসেন বলেন, আপাতত আমরা থার্মোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করছি এবং কোনো কিছু ধরা না পড়লে আমরা ক্লিয়ারেন্স সনদ দিচ্ছি।

কয়েকজন শিপিং এজেন্ট বলছেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের অধীন পোর্ট হেলথ বিভাগ বন্দর জেটিতে আসা জাহাজের নাবিকদের নিয়মিতভাবেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সনদ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেই কাজটি একেবারে দায়সারাভাবেই করে থাকেন। জাহাজে উঠে নামমাত্র দেখে ক্লিয়ারেন্স সনদ দেন। অনেক ক্ষেত্রে শিপিং এজেন্টরাই হেলথ বিভাগ অফিসারের কাছে গিয়েই সনদ নেন। কারণ এই সনদ ছাড়া জাহাজ বন্দর ছেড়ে যতে পারে না। ফলে নাবিক-প্রকৌশলীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বলতে যা বোঝায় তার ধারেকাছেই নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, বন্দর স্বাস্থ্য বিভাগ শুধুমাত্র জেটিতে ভিড়া জাহাজের নাবিক-প্রকৌশলদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেন। বন্দর জলসীমার ভিতরে আসা জাহাজে নাবিক-প্রকৌশলীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার সুযোগ নেই। এই কাজটি কেউ করে না।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট আসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি জাহাজ আমাদের বন্দরে আসে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, বেশি কড়াকড়ি নয় কিন্তু প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সর্তক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জলসীমায় প্রচুর পণ্যবাহী জাহাজ আসছে। এসব জাহাজ থেকে পণ্য আরেক জাহাজে নামিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বহির্নোঙরে পণ্য স্থানান্তর কাজ করে থাকে দেশিয় শিপ হ্যান্ডেলিং অপারেটররা। ফলে চীন থেকে আসা জাহাজের নাবিকের সাথে দেশিয় জাহাজে হ্যান্ডেলিং কর্মীদের সংস্পর্শে আসছেন। পণ্য জাহাজ থেকে নামানোর পর দেশিয় কর্মীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন। ফলে তাদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। কারণ করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে।

করোনাভাইরাস সতকর্তা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তুতি কী জানতে চাইলে বন্দর সচিব ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্দরের সদস্য প্রশাসনের উদ্যোগে আজকে একটি আলোচনা হয়েছে। সেখানে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

করোনা ভাইরাসের কথা চিন্তা করেই আমাদের প্রয়োজনে কঠোরও হতে হবে। বিশেষ করে চায়না থেকে আসা জাহাজের প্রতি আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তবে সেটি আমাদের একার পক্ষে সম্ভব না। বন্দর ব্যবহারকারী ও শিপিং এজেন্টদের এর সাথে সম্পৃক্ত করেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সকল বিমানবন্দরে সর্তকর্তা জারি করা হয়েছে।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!